দর্শনা: বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত শহর
দর্শনা, বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ শহর। খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলায় অবস্থিত এই শহরটি তার সীমান্তবর্তী অবস্থান এবং দর্শনা রেলওয়ে স্টেশনের জন্য বিখ্যাত। প্রায় ১২.৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই শহরে বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার মানুষ বসবাস করে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
দর্শনার নামকরণের ইতিহাস ১৮০০ সালের পূর্বেই শুরু হয়। ১৭৮৭ সালের ২১শে মে নদীয়া জেলার গঠনের সময় থেকেই এই স্থানটি দর্শনা নামে পরিচিত ছিল। রেনল্ড গেজেট অনুসারে, ১৮০০ সালের প্রথম দিকেও এটি দর্শনা নামেই পরিচিত ছিল। নামকরণের পেছনে বিভিন্ন মত থাকলেও, “দর্শন” শব্দ থেকে দর্শনা নামকরণের কথা বেশি প্রচলিত। এই অঞ্চল ট্রানজিট পয়েন্ট, ইক্ষু চাষের উপযোগী, রেলপথের জন্য উপযুক্ত এবং নদীমাতৃক পরিবেশের কারণে 'দর্শন' শব্দটির সাথে যুক্ত হয়ে দর্শনা নামটি গ্রহণ করে।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা:
৪ঠা ডিসেম্বর দর্শনা হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সাথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছিল দর্শনা। মুক্তিযুদ্ধে এর ছদ্মনাম ছিল “DINGA”। অনেক দর্শনাবাসী ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হয়েছেন। তাদের স্মৃতিরক্ষার্থে শহীদ মিনার ও সরকারি কলেজে শহীদদের তালিকা সংরক্ষিত আছে।
অর্থনীতি ও পর্যটন:
ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত কেরু এন্ড কোং এশিয়ার বৃহত্তম চিনিকল দর্শনার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট এবং এখানে একটি মনোরম গেস্ট হাউজও রয়েছে। দর্শনায় ১ কিলোমিটার ব্যবধানে ২টি আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেস ভারতে যাতায়াত করে। এখানে আন্তর্জাতিক মানের কাস্টমস অফিস ও শুল্কগুদাম রয়েছে, যা সরকারের রাজস্ব আহরণে গুরুত্বপূর্ণ। শতবর্ষেরও বেশি পুরোনো স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দর্শনার শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছে।