দাজ্জাল: ইসলামি কিয়ামতের পূর্বে আবির্ভূত হওয়া এক প্রতারক
ইসলাম ধর্মে দাজ্জালকে কিয়ামতের পূর্বে আবির্ভূত হওয়া এক মহা প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আরবি ভাষায় ‘দাজ্জাল’ (دجال) শব্দের অর্থ প্রতারক, মিথ্যাবাদী। হাদিস অনুসারে, সে নিজেকে ঈশ্বর বা ঐশ্বরিক শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি বলে দাবি করবে এবং অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শন করে অনেক মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। তার আগমন সাধারণত পূর্বাঞ্চলে, খোরাসান, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী কোনো এলাকা থেকে হবে বলে উল্লেখ রয়েছে।
দাজ্জালের বর্ণনা:
হাদিসে দাজ্জালের বর্ণনায় বলা হয়েছে সে একচোখা হবে, যদিও কোন চোখ অন্ধ তা নির্দিষ্ট নয়। তার অলৌকিক ক্ষমতা থাকবে, যেমন অসুস্থদের সুস্থ করা, মৃতদের জীবিত করা (শয়তানের সাহায্যে), গাছপালা ও পশুপালের বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। কিন্তু মক্কা ও মদিনা ছাড়া সকল শহরে প্রবেশ করতে পারবে। ইহুদি, বেদুইন, তাঁতি, জাদুকর ও অবৈধ সন্তানরা তার অনুসারী হবে।
দাজ্জালের পরাজয়:
হাদিস অনুযায়ী, দাজ্জালের আবির্ভাবের কিছুদিন পর ঈসা (আঃ) দামেস্কের পূর্ব দিকে অবতরণ করবেন এবং দাজ্জালকে ইসরায়েলের লোদ নামক স্থানে হত্যা করবেন। এরপর ঈসা (আঃ) এর ন্যায়সঙ্গত শাসন প্রতিষ্ঠা হবে এবং সকলেই ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করবে।
বিভিন্ন মত:
দাজ্জালের প্রকৃতি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কিছু মহল তাকে মানুষ হিসেবে, আবার অন্য মহল তাকে শয়তানের রূপে বিবেচনা করে। সুন্নি মুসলমানদের মতে দাজ্জাল 40 দিন থাকবে, প্রথম দিন বছরের মত, দ্বিতীয় দিন মাসের মত, তৃতীয় দিন সপ্তাহের মত, বাকি দিন স্বাভাবিক দিনের মত। শিয়া মুসলমানদের মতে দাজ্জালের আবির্ভাব মাহদির আবির্ভাবের আগেই হবে।
উপসংহার:
দাজ্জাল ইসলামি Eschatology-এর এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তার আবির্ভাব কেবলমাত্র কিয়ামতের আগমনের লক্ষণ নয়, বরং মানুষের বিশ্বাস ও ঈমানের পরীক্ষা। দাজ্জালের প্রকৃতি ও কাজকর্ম নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা থাকলেও, তার প্রতারণামূলক প্রকৃতি ও ঈসা (আঃ) দ্বারা পরাজয়ের কথা ইসলামি বিশ্বাসের অংশ।