দক্ষিণ শাহবাজপুর: মৌলভীবাজারের ঐতিহ্য ও বর্তমানের সমন্বয়
বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন হল দক্ষিণ শাহবাজপুর। প্রায় ৪০.৪৬ বর্গমাইল আয়তনের এই ইউনিয়নের জনসংখ্যা প্রায় ২৬,৮৪০ জন। ইউনিয়নের নামকরণ হয়েছে এর প্রধান গ্রাম দক্ষিণ শাহবাজপুরের নামানুসারে।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
শাহবাজপুরের ইতিহাস বেশ পুরানো। একসময় এটি কাউয়াকোণা নামে পরিচিত ছিল। এখানে জাংদার বংশের হিন্দু জমিদাররা বসবাস করতেন। স্বরূপরাম জাংদার নামে একজন জমিদার সম্রাটের সাথে রাজস্ব নিয়ে আলোচনা করতে দিল্লী গমন করেন এবং পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ধর্মান্তরের পর তিনি শাহবাজ খান নামে অভিষিক্ত হন এবং বৃহত্তর পঞ্চখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে শাহবাজপুর পরগণা প্রতিষ্ঠা করেন। তার একমাত্র পুত্র ফতেহ মোহাম্মদ (১৭০০-১৭৯০-এর দশক) পরবর্তী জমিদার হন। এরপর মোহম্মদ ফাজিল, মোহম্মদ আদিল, আব্দুল গফুর চৌধুরী ও নোমান মুকিদ চৌধুরী শাহবাজপুরের জমিদার হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। জাংদার বংশের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে একটি প্রবাদও প্রচলিত: “পাল, প্রচণ্ড, জাংদার। এই তিন মিরাশদার।”
বর্তমান অবস্থা:
দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন প্রায় ৪০ টি গ্রাম, ৯ টি ওয়ার্ড এবং ১৪ টি মৌজায় বিভক্ত। জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক পুরুষ এবং অর্ধেক মহিলা। ইউনিয়নে ৯ টি সরকারি ও ৩ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫ টি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ৬ টি মাদ্রাসা রয়েছে। শিক্ষার হার ৫৪.৩%। মহ বড়গুল কওমি মাদ্রাসায় একটি এতিমখানাও রয়েছে। দক্ষিণ শাহবাজপুরে ৪ টি হাট বাজার (মহাম্মদনগর, তারাদরম, মুরাউল, অফিস বাজার) রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী এই ইউনিয়নের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বোবারথলে কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে, যা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। চারটি চা বাগান, ৫টি ক্রীড়া ক্লাব, ৪২টির বেশি মসজিদ এবং ৬টি ঈদগাহ দক্ষিণ শাহবাজপুরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
২০১৯ সালের আগস্টে ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) বোবারথল মাঝগন্ধাই গ্রামের এক বাসিন্দাকে গুলি করে হত্যা করে।
দক্ষিণ শাহবাজপুরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, জনসংখ্যা, অর্থনীতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থার বর্ণনা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এই ইউনিয়নের ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।