তাড়াইল উপজেলা: কিশোরগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। ১৪১.৪৩ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলাটি ২৪°৩০´ থেকে ২৪°৩৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৯´ থেকে ৯০°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে কেন্দুয়া ও মদন উপজেলা, দক্ষিণে করিমগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে ইটনা উপজেলা এবং পশ্চিমে নান্দাইল ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ১৯২৮ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
তাড়াইলের জনসংখ্যা প্রায় ১৫৯৭৩৯ জন, যার মধ্যে পুরুষ ৭৯১৯৯ এবং মহিলা ৮০৫৪০। জনসংখ্যার বেশিরভাগ (১৫২৮৫২) মুসলিম, হিন্দু ৬৮১৭, খ্রিষ্টান ১৬ এবং অন্যান্য ৫৪ জন। উপজেলার প্রধান নদী হলো বাঠাইল, বারুনী, নরসুন্দা ও বুড়িনদী। ধলাচাইনা বিল, মাকরাউন্দা বিল, কার্তার বিল, বড় বিল, নয়লা বিল, গজনা বিল ও পূবাইল বিল উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, তাড়াইলে সাহেববাড়ি জামে মসজিদ (৯৪১ হিজরি), পুরুড়া গ্রাম মসজিদ (মুঘল আমল), সাহেব বাড়ির মসজিদ ও মাযার (সেকান্দর নগর), গিরিশ চন্দ্র পালের কাচারী বাড়ি (১৩৩৩ বঙ্গাব্দ), এবং জমিদার রাজচন্দ্র রায়ের স্মৃতিসৌধ উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধে তাড়াইলে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়, এবং এখানে দুটি বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হয়েছে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে, কৃষি তাড়াইলের প্রধান অর্থনৈতিক উৎস (৬৯.৭৫%)। ধান, পাট, গম, সরিষা, মরিচ, পিঁয়াজ প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, লিচু, কুল প্রধান ফল। অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে অকৃষি শ্রমিক, শিল্প, ব্যবসা, পরিবহণ ও যোগাযোগ, চাকরি, নির্মাণ ইত্যাদি। তাড়াইল বাজার, তালজাঙ্গা বাজার, জাওয়ার বাজার ও পুরুড়া বাজার উল্লেখযোগ্য বাজার।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ইত্যাদি। তাড়াইল মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয় (১৯৯২), তাড়াইল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), জাওয়ার উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৩) উল্লেখযোগ্য। উপজেলায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালের বন্যা তাড়াইল উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছিল। ব্র্যাক, আশা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য এনজিও। তাড়াইল উপজেলা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রাপ্তির সাথে সাথে এই তথ্য আপডেট করা হবে।