তামাক: এক নেশা, এক বিপদ
তামাক, এক অতি পরিচিত নাম। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীদের কাছে একসময় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও চিকিৎসার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও আজ তামাক বিশ্বব্যাপী এক ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তামাক গাছ (Nicotiana tabacum) Solanaceae পরিবারের অন্তর্গত। ১২-১৮ ইঞ্চি লম্বা এই গাছের শুকনো পাতা তামাক নামে পরিচিত। এর মূল নেশাদায়ক উপাদান নিকোটিন, যা এক ধরনের স্নায়ুবিষ। তামাক সেবনের নানা রূপ রয়েছে: সিগারেট, বিড়ি, চুরুট, হুক্কা, জর্দা, গুল, নস্যি ইত্যাদি।
ইতিহাসের পাতায়:
৬০০-৭০০ খ্রিস্টাব্দে মেক্সিকোতে তামাক চাষের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের পর ইউরোপে তামাকের আগমন ঘটে। ১৫৫৯ সালে স্পেনের রাজা ফিলিপ দ্বিতীয় ইউরোপে তামাকের বীজ নিয়ে আসেন। ১৫০৮ সালে পর্তুগিজরা ভারতে নিকোটিনা রুস্টিকা নামক আরেক প্রজাতির তামাক নিয়ে আসে, যা ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্জিনিয়া তামাক ভারতে আসে। জ্যাঁ নিকোট নামক একজন ব্যক্তি ফ্রান্সে তামাকের ব্যবহার প্রচলন করেন, আর তাঁর নামানুসারে Nicotiana নামকরণ করা হয়।
ভারতে তামাক:
অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরে তামাক বোর্ড অবস্থিত। ভারতে প্রায় ৯৬,৮৬৫ জন নিবন্ধিত তামাক চাষী রয়েছে। তামাক চাষাবাদ ভারতের প্রায় ০.২৫% চাষাবাদযোগ্য জমিতে হয়। ২০১০ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে প্রায় ৩,১২০ টি তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনের কারখানা রয়েছে।
তামাকের ব্যবহার এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব:
তামাকের ধোঁয়ায় নিকোটিনের সাথে বহু ক্যান্সারপ্রদায়ী পদার্থ (যেমন বেঞ্জোপাইরিন) থাকে। তামাক সেবন ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, নিম্ন শ্বাসযন্ত্রের রোগ, মুখ ও গলার ক্যান্সার সহ আরও নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। একখানি সিগারেটের সমস্ত তামাক শরীরে প্রবেশ করলে দ্রুত মৃত্যু হতে পারে। ধীরে ধীরে তামাকের ব্যবহার আয়ু কমিয়ে দেয়।
বিজ্ঞানে তামাক:
গাছের কোষ বিজ্ঞানে গবেষণার কাজে তামাক গাছ ব্যবহার করা হয়। আধুনিক কৃষি জীবপ্রকৌশলের উন্নয়নে তামাক গাছকে মডেল হিসেবে গবেষণা করা হয়েছে। ১৯৮২ সালে প্রথম জীনপ্রকৌশল ব্যবহার করে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী তামাক গাছ তৈরি করা হয়।
উপসংহার:
তামাক সেবন এক অত্যন্ত ক্ষতিকর অভ্যাস। এটির ক্ষতিকর প্রভাব স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সমাজের উপর ব্যাপকভাবে পড়ে। তাই, তামাক সেবন বর্জন করা অত্যন্ত জরুরী।