তাইওয়ান সরকার, আনুষ্ঠানিকভাবে চীন প্রজাতন্ত্র (中華民國, Zhōnghuá Mínguó) নামে পরিচিত, পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপরাষ্ট্রের সরকার। ১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধের পর চীনা জাতীয়তাবাদী দল, কুওমিংতাং (KMT), চীনের মূল ভূখণ্ড হারিয়ে তাইওয়ানে আশ্রয় নেয় এবং এখানেই তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করে। তাইওয়ান সরকারের অধীনে তাইওয়ান দ্বীপ, পেস্কেডোর্স (পর্তুগিজ: Pescadores), কিনমেন, মাৎসু প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত। তাইওয়ান ও ফেংহু দ্বীপপুঞ্জ (তাইপে ও কাওসিউং পৌরসভা বাদে) প্রজাতন্ত্রী চীনের তাইওয়ান প্রদেশ হিসেবে প্রশাসিত হয়।
তাইওয়ানের ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন শক্তির শাসন দেখা গেছে। ১৭ শতকে কিছু সময় ওলন্দাজদের দখলে ছিল, পরে চীনের কিং রাজবংশ, ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত শাসন করে। ১৮৯৫ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানের অধীনে থাকার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীন প্রজাতন্ত্রের অধীনে আসে তাইওয়ান। ১৯৪৯ সাল থেকে তাইওয়ান সরকারের শাসন চলে আসছে।
১৯৬০ দশকের শুরু থেকে তাইওয়ান দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও শিল্পায়ন করে, যাকে "তাইওয়ান মিরাকেল" বলা হয়। ১৯৮০-এর দশকের শেষভাগ থেকে ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে একদলীয় স্বৈরশাসন থেকে বহুদলীয় অর্ধ-রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতন্ত্রে রুপান্তরিত হয় তাইওয়ান। বর্তমানে তাইওয়ান একটি উন্নত দেশ এবং বিশ্বের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে উচ্চ প্রযুক্তি শিল্পে।
তাইওয়ানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন বিতর্কিত। চীনের জনগণ প্রজাতন্ত্র (PRC) তাইওয়ানকে নিজস্ব অংশ বলে দাবি করে এবং তাইওয়ান সরকারকে স্বীকৃতি দেয় না। ফলে তাইওয়ান জাতিসংঘের সদস্য নয় এবং কেবলমাত্র সীমিত সংখ্যক দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখে। তবে তাইওয়ান বিশ্ব ব্যবসা সংঘ, এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সংঘ, এবং এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত।
তাইওয়ান সরকারের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি জটিল। চীনের সাথে একীভূত হওয়া কিংবা আলাদা জাতিত্ব হিসেবে টিকে থাকা- এই দুই ধারার মধ্যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। তবে বর্তমানে তাইওয়ান গণতন্ত্রের মাধ্যমে নিজের শাসন পরিচালনা করে। চীনের সামরিক হুমকির কারণে তাইওয়ানের সামরিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছে।