ডাল

বাংলাদেশের খাদ্য সংস্কৃতিতে ডালের গুরুত্ব অপরিসীম। শিম গোত্রের এই খাদ্যশস্য প্রোটিনের এক অমূল্য উৎস। মসুর, ছোলা, মুগ, মাষকলাই, অড়হর, খেসারি, এই বিভিন্ন ধরণের ডাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হয়। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশে ডালের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ২৫০০-২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গাঙ্গেয়-ভাগীরথী উপত্যকায় ডালের চাষের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ডাল প্রধানত রবি ফসল। বৃহত্তর ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং বরিশাল জেলা ডাল চাষের জন্য বিখ্যাত। দুই দশক আগে ডাল চাষাধীন জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩,৩০,০০০ হেক্টর। কিন্তু ধান চাষের বৃদ্ধির ফলে এখন ডাল চাষের জমি কমে যাচ্ছে। ফলে দেশের চাহিদা মেটাতে প্রচুর পরিমাণে ডাল আমদানি করতে হয়।

ডালে প্রোটিনের পরিমাণ ২০-২৫%। এতে লাইসিন, শর্করা, চর্বি এবং বিভিন্ন খনিজ লবণও রয়েছে। গমের তুলনায় ডালে প্রায় দ্বিগুণ এবং চালের তুলনায় প্রায় তিনগুণ প্রোটিন আছে। এ কারণে ডালকে 'গরিবের আমিষ' বলা হয়। খেসারি ডাল প্রধানত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তবে উত্তরাঞ্চলে এটি খাদ্য হিসেবেও জনপ্রিয়। মসুর ডাল প্রায় সকলের কাছেই জনপ্রিয় এবং ভোজের প্রধান খাবার। রমজান মাসে ইফতারে ছোলার ডালের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

ডাল দিয়ে বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরি করা হয়। খিচুড়ি, পিঁয়াজু, ঘুঘনি, চটপটি, ডালপুরি সহ নানা রকমের খাবার ডাল দিয়ে তৈরি হয়। ডাল বেটে শুকিয়ে ডালের বড়ি তৈরি করা হয়। ডাল থেকে বিভিন্ন ধরণের মিষ্টিও তৈরি করা হয়, যেমন মুগের জিলিপি। শবে বরাতের দিন ডাল দিয়ে হালুয়া তৈরি করা হয়। ডাল বাংলাদেশের খাদ্যতালিকার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

মূল তথ্যাবলী:

  • ডাল প্রোটিনের এক উৎকৃষ্ট উৎস
  • বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের ডাল চাষ হয়
  • প্রাচীনকাল থেকেই ডালের ব্যবহার রয়েছে
  • ধান চাষের বৃদ্ধির ফলে ডাল চাষ কমে যাচ্ছে
  • ডাল দিয়ে বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরি হয়