জ্যোতির্ময় বড়ুয়া (বেণীমাধব বড়ুয়া): একজন বিশিষ্ট পণ্ডিত ও শিক্ষাবিদ
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, যাঁর আসল নাম বেণীমাধব বড়ুয়া, ছিলেন একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান পণ্ডিত ও শিক্ষাবিদ। ১৮৮৮ সালের ৩১শে ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার মহামুনি গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা রাজচন্দ্র তালুকদার ছিলেন একজন কবিরাজ। বাল্যকালেই তিনি পারিবারিক ‘তালুকদার’ উপাধি পরিত্যাগ করে ‘বড়ুয়া’ উপাধি গ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবন:
বেণীমাধব বড়ুয়া গ্রাম্য মডেল স্কুল থেকে মিডল ইংলিশ (এম.ই), চট্টগ্রাম সরকারি কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৯০৬) এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফএ (১৯০৮) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্টার্ড কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে পালিতে অনার্সসহ বিএ (১৯১১) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (১৯১৩) ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতা ল’ কলেজ থেকে আইনের প্রথম পর্ব পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। ১৯১৪ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি পেয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং গ্রিক ও আধুনিক ইউরোপীয় দর্শনে এমএ এবং বৌদ্ধশাস্ত্র ও ভারতীয় দর্শনে ডিলিট (১৯১৭) ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন:
শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি বেণীমাধব বড়ুয়া শিক্ষকতাও করেন। ১৯১২ সালে মহামুনি অ্যাংলো-পালি ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগেও প্রভাষক হিসেবে কাজ করেন (১৯১৩-১৪)। দেশে ফিরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং পরে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন (১৯২০)। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ (১৯১৯-৪৮) এবং সংস্কৃত বিভাগের (১৯২৭-৪৮) সাথেও যুক্ত ছিলেন। বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম এবং শিলালিপি বিষয়েও তিনি গবেষণা ও অধ্যাপনা করেন।
সাহিত্যকর্ম:
বেণীমাধব বড়ুয়া অসংখ্য গ্রন্থ ও গবেষণা নিবন্ধ রচনা করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল A History of Pre-Buddhistic Indian Philosophy (১৯২১), A Prolegomena to a History of Buddhist Philosophy (১৯১৮), The Ajivikas (১৯২১), Old Brahmi Inscrptions in the Udayagiri and Khandgiri (১৯২৬), Gaya & Buddha Gaya (১৯৩১, ১৯৩৪), Asoka and His Inscriptions (১৯৪৬), Studies in Buddhism (১৯৪৭), এবং বাংলায় মধ্যম নিকায় (১ম খন্ড, ১৯৪০), বৌদ্ধ গ্রন্থকোষ (১ম খন্ড, ১৯৩৬) ইত্যাদি। শতাধিক প্রবন্ধ ও বক্তৃতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
সম্মান ও পুরস্কার:
তিনি Royal Asiatic Society of Bengal-এর Fellow, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য, কলকাতার মহাবোধি সোসাইটি ও ইরান সোসাইটির কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। Indian Culture, Buddhist India, জগজ্জ্যোতি ও বিশ্ববাণী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। শ্রীলঙ্কা থেকে ‘ত্রিপিটকাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত হন।
মৃত্যু:
১৯৪৮ সালের ২৩শে মার্চ কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।