জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী: বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ
ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী (১৫ নভেম্বর, ১৯৪৩ - ২৮ এপ্রিল, ২০২০) ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট প্রকৌশলী, গবেষক, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী এবং তথ্য-প্রযুক্তিবিদ। তাঁর জীবনকাল ধরে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন, বিশেষ করে প্রকৌশল, তথ্য প্রযুক্তি এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
জন্ম সিলেটে, ড. চৌধুরীর শৈশব কেটেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে পিতার চাকরির সুবাদে। তিনি সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে, বার্মাশেল বৃত্তি নিয়ে তিনি ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডভান্সড স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএসসি এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন:
বুয়েটে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষকতা জীবন। পরবর্তীতে তিনি বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান এবং ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় ১০ বছর বুয়েটের কম্পিউটার সেন্টারের পরিচালক ছিলেন। ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য এবং ২০১২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা (মন্ত্রী) হিসেবেও কাজ করেছিলেন।
অবদান:
ড. চৌধুরী বাংলাদেশের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু সেতু, পদ্মা বহুমুখী সেতু এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সহ অনেক মেগা প্রকল্পের পরামর্শক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় বিল্ডিং কোড তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি সফটওয়্যার রপ্তানি এবং আইটি অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ছিলেন।
সম্মাননা ও পুরস্কার:
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক এবং ২০১৮ সালে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে সম্মানিত হন। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদান করে।
মৃত্যু:
২৮ এপ্রিল ২০২০ সালে ৭৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
উত্তরাধিকার:
ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর জ্ঞান, দক্ষতা এবং দেশপ্রেম নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।