জনস্বার্থের ধারণাটি আইন ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি এমন একটি আইনি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন, যাদের সরাসরি কোনো ক্ষতি হয়নি, জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষার জন্য আদালতে মামলা করতে পারে। বাংলাদেশে জনস্বার্থের ধারণাটি স্থিতি-অধিকারের (Locus Standi) উদারীকরণের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে, অ্যাংলো-স্যাক্সন আইন ব্যবস্থায় শুধুমাত্র সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিই মামলা করার অধিকার পেত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাজ্যে কল্যাণমূলক অর্থনীতির প্রসারের ফলে ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়।
বাংলাদেশে জনস্বার্থের ধারণাটি প্রথমবারের মতো ১৯৭৪ সালে কাজী মোকলেসুর রহমান বনাম বাংলাদেশ (২৬ ডিএলআর (এডি) ৪৪) মামলার মাধ্যমে উঠে আসে। এই মামলায় দিল্লি চুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৯৬ সালে ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান মামলায় আপিল বিভাগ স্থিতি-অধিকারের ধারণার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে। এই সিদ্ধান্তের পর, বেশ কয়েকটি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা হাইকোর্টে দায়ের করা হয়।
১৯৯৭ সালে ফ্লাড অ্যাকশন মামলায় সরকারকে পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান রক্ষার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। ১৯৯৯ সালে, উত্তরা মডেল টাউনে পার্ক ও অন্যান্য সাধারণ সুবিধার জন্য নির্ধারিত ভূমির পরিমাণ হ্রাস করা থেকে বিরত থাকতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়াও, গুলশানে পার্ক জঞ্জালমুক্ত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়, জেলখানায় বন্দির ডান্ডাবেড়ি অপসারণ, হাতকড়ায় আবদ্ধ মহিলাকে মুক্তি, ঢাকা শহরে অবৈধভাবে নির্মিত ভবন ও বস্তি উচ্ছেদের স্থগিতাদেশ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
ব্রাক বনাম অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এবং ইটিভি লিঃ বনাম ডঃ চৌধুরী মাহমুদ হাসান মামলায় আপিল বিভাগ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলায় বিভিন্ন রায় প্রদান করেছে। এই দুটি বিপরীত মতামতের ফলে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলার সীমাবদ্ধতা ও ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অপ্রয়োজনীয় মামলা রোধের জন্য, আদালতকে আরো সতর্ক থাকা এবং আবেদনকারীর সদুদ্দেশ্য নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের মতো, খারিজ হওয়া মামলার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা দায়েরের মাধ্যমে নিপীড়িত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অবস্থার উন্নয়ন এবং দুর্ভোগ মোচন করা সম্ভব, তবে এর অপব্যবহার রোধ করা গুরুত্বপূর্ণ।