চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ: দুই জেলার ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক যাত্রা
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলা দুটি ভৌগোলিকভাবে ও ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুয়াডাঙ্গা জেলা খুলনা বিভাগের অন্তর্গত, যা উত্তরে কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর, পূর্বে ও দক্ষিণে ঝিনাইদহ এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে অবস্থিত। অন্যদিকে, ঝিনাইদহ জেলাও খুলনা বিভাগের অন্তর্গত, চুয়াডাঙ্গার দক্ষিণ ও পূর্বে অবস্থিত।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
চুয়াডাঙ্গার ইতিহাস প্রাচীনকালে বিস্তৃত। গ্রিক ঐতিহাসিকদের মতে, এ অঞ্চলে বিখ্যাত গঙ্গারিডাই (গঙ্গাঋদ্ধি) রাজ্যের অবস্থান ছিল। ১৮৫৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম রেলপথ চুয়াডাঙ্গায় স্থাপিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; মুক্তিযুদ্ধের প্রথম কমান্ড, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড এখানেই গঠিত হয় এবং এক সময় এটি স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয় (যদিও পরবর্তীতে মুজিবনগরে স্থানান্তরিত হয়)।
ঝিনাইদহের ইতিহাসও সমৃদ্ধ। মোগল আমলে এটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। শেরপুর, মহেশপুর, কালীগঞ্জ প্রভৃতি এলাকা এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের সাক্ষী।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:
চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ দুই জেলাই সমতল ভূমি। মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, কুমার, চিত্রা ও নবগঙ্গা নদী চুয়াডাঙ্গার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত। ঝিনাইদহেও নদ-নদীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
অর্থনীতি:
চুয়াডাঙ্গা কৃষিপ্রধান জেলা। ধান, গম, পাট, পান, ভুট্টা, আম প্রভৃতি উৎপাদন হয়। ঝিনাইদহেও কৃষিকাজ গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি বস্ত্রশিল্প ও অন্যান্য কুটিরশিল্পের উন্নয়ন লক্ষ্য করা যায়। চুয়াডাঙ্গায় কেরু এন্ড কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি বৃহৎ চিনি কল অবস্থিত।
জনসংখ্যা:
দুটি জেলারই জনসংখ্যা বেশি। অধিকাংশ লোক কৃষিকাজ ও কুটিরশিল্পের সাথে জড়িত।
উপসংহার:
চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি জেলা। ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী, ভৌগোলিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ এবং কৃষিকাজ ও অন্যান্য শিল্পের মাধ্যমে এরা অর্থনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।