চান্দিনা, কুমিল্লা: ঐতিহাসিক গৌরব ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমন্বয়
বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা হল চান্দিনা উপজেলা। এটি কুমিল্লার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। উপজেলার উত্তরে দাউদকান্দি, মুরাদনগর এবং দেবিদ্বার উপজেলা, দক্ষিণে বরুড়া এবং চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলা, পূর্বে বুড়িচং, বরুড়া এবং কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, এবং পশ্চিমে দাউদকান্দি এবং চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলা অবস্থিত।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
চান্দিনা উপজেলার নামকরণের পেছনে একটি কিংবদন্তী রয়েছে। ১৬৭৫ সালে মির্জা হোসেন আলী খাঁ মোঘল সুবাদার হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর এখানে সদর দপ্তর স্থাপন করেন। তখন এ স্থানটি 'বরকামতা' নামে পরিচিত ছিল। জঙ্গল ও বাঘের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত জনসাধারণের জন্য সুবাদার উজ্জ্বল গ্যাসের বাতি জ্বালিয়ে ভয় দূর করতেন বলে জনশ্রুতি। এই বাতির আলোয় এলাকার নাম হয় 'চাঁদনী' বা 'চাঁদের আলোর মতো স্থান', যা পরবর্তীতে ইংরেজরা 'চান্দিনা' লিপিবদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে চান্দিনার অবদান:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চান্দিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কটতলা ও ফাউইতে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র লড়াই হয়। এছাড়াও, চান্দিনায় বেশ কয়েকটি বধ্যভূমি এবং গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
চান্দিনা উপজেলার আয়তন প্রায় ২০২ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় ৩,৫৮,৮২০ জন। এখানে ১টি পৌরসভা এবং ১৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। ১৮৭৬ সালে এখানে থানা সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়।
অর্থনীতি ও সংস্কৃতি:
চান্দিনার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, আলু, সরিষা, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে। কুটিরশিল্পের মধ্যে স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ এবং কাঠের কাজ উল্লেখযোগ্য। চান্দিনা হাট, মাধাইয়া হাট, নবাবপুর হাট, বদরপুর হাট উল্লেখযোগ্য হাটবাজার।
প্রকৃতি ও পর্যটন:
চান্দিনা প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। মেহার গ্রামের ঐতিহ্যবাহী তিন গুম্বুজ ওয়ালা জামে মসজিদ, ঘোগরার বিল পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ঘোগরার বিলের প্রায় ৫০-৬০ প্রজাতির মাছ, বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী, মৌসুমি পাখি, শাপলা এবং বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ বিচরণ করে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
চান্দিনা উপজেলায় কয়েকটি কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়াও, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে।
উন্নয়ন:
চান্দিনা উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। পল্লিবিদ্যুতায়ন, পানীয়জলের ব্যবস্থা, স্যানিটেশন সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলছে।
(বিঃদ্রঃ প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই প্রবন্ধটি রচিত হয়েছে। যদি অধিক তথ্য প্রয়োজন হয় তবে পরবর্তীতে আপডেট করা হবে।)