চট্টগ্রাম, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ নগরী। কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত এই নগরী দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং বাণিজ্যিক রাজধানী। ২০১৭ সালে এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ, পাহাড়, সমুদ্র ও উপত্যকায় ঘেরা চট্টগ্রাম 'প্রাচ্যের রাণী' নামে পরিচিত। এর সমৃদ্ধ ইতিহাস আরব, পর্তুগিজ, মুঘল, ব্রিটিশ ও আরাকানিদের শাসনকাল জুড়ে বিস্তৃত। চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের অন্যতম প্রাচীনতম ও ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর। ২০২২ সালে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল ৮২ লাখেরও বেশি। শহরটি বহু বৃহৎ স্থানীয় ব্যবসার কেন্দ্র, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
চট্টগ্রামের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। একটি মতে, এটি আরবি 'শাত' (বদ্বীপ) এবং 'গঙ্গা' শব্দ থেকে উৎপন্ন। আরও একটি মতে, আরাকানি রাজা সু-লা-তাইং-সন্দয়া এই স্থান জয় করার পর 'চেৎ-ত-গৌঙ্গ' (যুদ্ধ করা অনুচিত) লিপিযুক্ত একটি স্তম্ভ স্থাপন করেছিলেন, যা পরবর্তীতে চট্টগ্রাম নামে পরিচিত হয়।
ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম চাটিগাঁও, চাটগাঁ, চাতগাঁও, শ্যাৎগাঙ্গ, চৈত্যগ্রাম, চাটিগাম, চট্টগ্রাম, ইসলামাবাদ, চট্টল, চট্টলা, শ্রীচট্টল, চিতাগঞ্জ, চিৎ-তৌৎ-গৌং, সপ্তগ্রাম, জাটিগ্রাম, চার্টিগান, চতকাঁও, চৈত্যভূমি, রোসাং, জ্বালনধারা এবং পোর্টো গ্র্যান্ডে দে বেঙ্গালা নামেও পরিচিত ছিল।
চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে রয়েছে: আরব বণিকদের আগমন, আরাকানিদের শাসন, পর্তুগিজদের উপস্থিতি, মুঘলদের শাসন, ব্রিটিশ শাসন, ১৯৩০ সালের চট্টগ্রাম বিদ্রোহ এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এর ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম থেকেই স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়।
চট্টগ্রাম বর্তমানে একটি প্রধান বাণিজ্যিক ও শিল্প কেন্দ্র। এখানে বন্দর, জাহাজ নির্মাণ, তৈরি পোশাক, পেট্রোলিয়াম শিল্প, চা নিলাম প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এখানে অবস্থিত।
শহরটির ভৌগোলিক অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের কাছে এবং বঙ্গোপসাগরের তীরে। কর্ণফুলী নদী শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। চট্টগ্রামে বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা, দুর্গ, মসজিদ, দরগাহ, সমুদ্র সৈকত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে।
চট্টগ্রামের জনসংখ্যা, ভাষা, ধর্ম, এবং সংস্কৃতি বহুজাতিক ও বহুসংস্কৃতির সমন্বয়ে গঠিত। চাটগাঁইয়া ভাষা এখানে প্রচলিত। বর্তমানে চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও প্রশাসনের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) প্রভৃতি সংস্থার উপর ন্যস্ত। তবে অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে জলাবদ্ধতা, পাহাড় ক্ষয়, পরিবেশ দূষণ প্রভৃতি গুরুতর সমস্যা দেখা দিয়েছে।