গড়াই নদী

আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:৪৬ এএম

গড়াই নদী: পদ্মার একটি প্রধান শাখানদী

গড়াই নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী, যা গঙ্গা ও পদ্মার একটি প্রধান শাখানদী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক একে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ২৪ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

উৎপত্তি ও প্রবাহপথ:

গড়াই নদীর উৎপত্তিস্থল কুষ্টিয়া জেলার হাটশহরিপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদী। এটি কুষ্টিয়া জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঝিনাইদহ জেলায় প্রবেশ করে, তারপর ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সীমানা বরাবর, চাদর গ্রাম হয়ে রাজবাড়ী জেলায় প্রবেশ করে। ঝিনাইদহ-রাজবাড়ী, মাগুরা-রাজবাড়ী ও মাগুরা-ফরিদপুর জেলার সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে এটি মধুমতি নদী নামে নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। একসময় গঙ্গার প্রধান ধারা গড়াই নদী দিয়ে প্রবাহিত হতো, যদিও হুগলি-ভাগীরথী ছিল গঙ্গার আদি ধারা। কুষ্টিয়া জেলার উত্তরে হার্ডিঞ্জ সেতুর ১৯ কিলোমিটার ভাটিতে তালবাড়িয়া নামক স্থানে গড়াই নদী পদ্মা থেকে উৎপন্ন হয়েছে।

দৈর্ঘ্য ও শাখা-প্রশাখা:

গড়াই নদীর দৈর্ঘ্য ৮৯ কিমি, মধুমতি নদীর ১৩৭ কিমি এবং বলেশ্বর নামে ১৪৬ কিমি, মোট ৩৭২ কিমি। এর শাখা-প্রশাখার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কুমার নদী, কালীগঙ্গা, ডাকুয়া, বুড়ি গড়াই, বুড়িশাল, নবগঙ্গা, চিত্রা, কপোতাক্ষ, আঠারোবাঁকি ইত্যাদি। চন্দনা, বারাশিয়া, কুমার নদী প্রভৃতি এর উপনদী।

নাব্যতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

উৎপত্তিস্থল থেকে কামারখালী পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে ছোট নৌযান চলাচল করে। কামারখালী থেকে ভাটির অংশ সারা বছর নাব্য। নৌপথে পণ্য পরিবহন ও মৎস্য আহরণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গড়াই নদী। মধুমতি নদীর তীরবর্তী অঞ্চল উর্বর, ফলে কৃষিকাজের জন্য উপযোগী।

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গড়াই-পদ্মা নদীর তীরে জীবনের অনেক সময় কাটিয়েছেন এবং তার লেখায় এই দুটি নদীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। তিনি গড়াই নদীকে কখনও 'গৌরী' ও কখনও 'গোড়াই' নামেও উল্লেখ করেছেন।

বর্তমান অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ:

গড়াই নদী ভাঙন প্রবণ। নদী ভাঙনের ফলে কুষ্টিয়ার রেন-উইক কারখানা, গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প অফিস ও বাণিজ্যিক এলাকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কুমারখালী বন্দর ও জানিপুর বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাউবো নদী রক্ষার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি গড়াই নদীর পুনরুদ্ধার প্রকল্প নিয়ে অনেক কাজ হলেও পলি জমার সমস্যা এবং খনন প্রকল্পের অনিয়মের কারনে পূর্ণ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নদীর পানি প্রবাহ সীমিত হওয়ার ফলে মৎস্য উৎপাদন ও নৌ চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আরও তথ্য:

গড়াই নদী সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে আমরা এই নিবন্ধটি আপডেট করব।

মূল তথ্যাবলী:

  • গড়াই নদী গঙ্গা ও পদ্মার একটি প্রধান শাখানদী।
  • এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • নদীটি কুষ্টিয়া থেকে উৎপন্ন হয়ে মধুমতি নদীতে মিশেছে।
  • গড়াই-মধুমতি নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৭২ কিমি।
  • নদীটি নৌ চলাচল ও মৎস্য আহরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় গড়াই নদীর উল্লেখ আছে।
  • নদীটি ভাঙন প্রবণ এবং পুনরুদ্ধার প্রকল্প চলছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।