গোলাম কুদ্দুস: একজন বিশিষ্ট সাম্যবাদী কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
গোলাম কুদ্দুস (২০ জানুয়ারি ১৯২০ - ১৩ ডিসেম্বর ২০০৬) বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। ফরিদপুরের সাট্টিগ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই ব্যক্তিত্ব কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার ধলনগর গ্রামের পৈতৃক বাসিন্দা ছিলেন। তার পিতা গোলাম দরবেশ জোয়াদার ছিলেন একজন আইনজীবি এবং মাতা ছিলেন সৈয়দুন্নেসা খাতুন। শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক অংশ কাটে গ্রামের সোলেমান পণ্ডিতের পাঠশালায়, পরবর্তীতে হরিনারায়ণপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং কুষ্টিয়া হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন।
প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপক সুশোভন সরকারের প্রভাবে তিনি কমিউনিস্ট আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন এবং আমৃত্যু ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী হিসেবে কাজ করে যান। কলকাতার বেকার হস্টেলে বসবাসকালীন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিবেশী ছিলেন।
ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের সাথে ‘অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস’-এর যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ট্রেড ইউনিয়ন, কৃষকসভা, প্রগতিশীল লেখক সংঘ, রুশ-ভারত মৈত্রী সমিতি, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ প্রভৃতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ‘কালান্তর’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। সাংবাদিকতার জন্য ১৯৭২ সালে সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার লাভ করেন এবং ১৯৮৩ সালে ভারতীয় গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন তাকে বিশেষভাবে সংবর্ধনা জানায়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন গোলাম কুদ্দুস। কলকাতায় বিভিন্ন সভাসমিতিতে অংশগ্রহণ করে নৈতিক সমর্থন প্রদান করেন এবং কিছুদিন কুষ্টিয়ার পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে নির্যাতিত মানুষদের আশ্রয় দেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সুহৃদ কবি হিসাবে পরিচিত।
১৯৫০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিদীর্ণ’ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রকে নিয়ে ‘ইলা মিত্র’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। কবিতার পাশাপাশি প্রবন্ধ, ছোটগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন। চল্লিশের দশকে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সাথে ‘একসূত্র’ নামে ফ্যাসিবাদী কবিদের সংকলন সম্পাদনা করেন। বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, রবীন্দ্র, নজরুল, মুজফ্ফর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত হন। ২০০৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন এবং তার স্ত্রী হেনা মৈত্র একজন বিশিষ্ট অধ্যাপিকা ছিলেন।