গির্জা

গির্জা: খ্রিস্টানদের গণউপাসনালয়

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য গির্জা হল পবিত্র উপাসনার স্থান। এটি কেবলমাত্র এক একটি ভবন নয়, বরং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক কেন্দ্রবিন্দু। প্রাচীনকাল থেকেই গির্জাগুলি খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন দিকের প্রতিফলন ঘটিয়ে আসছে - ইতিহাস, স্থাপত্য, সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিকতা।

প্রাচীনতম গির্জা: ২৩৩-২৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হাউস চার্চকে প্রাচীনতম গির্জা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১১ থেকে ১৪ শতক পর্যন্ত পশ্চিম ইউরোপে গির্জা নির্মাণের এক অভূতপূর্ব জোয়ার দেখা দেয়। এই সময়ে বহু ক্যাথেড্রাল ও প্যারিশ গির্জা নির্মিত হয়, যা শুধুমাত্র উপাসনার স্থান হিসেবে নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্যও ব্যবহৃত হতো।

গির্জার স্থাপত্য: খ্রিস্টান স্থাপত্যে অনেক গির্জা ক্রুশের আকৃতি ধারণ করে। মাঝখানের করিডোর ও আসন উল্লম্ব বিমের, এবং বিমা ও বেদী আনুভূমিক বিমের প্রতিনিধিত্ব করে। টারওয়ার ও গম্বুজ স্বর্গীয় ধ্যানের অনুপ্রেরণা জোগায়। আধুনিক গির্জাগুলি নানা স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত হয়।

গির্জার নামকরণ: 'চার্চ' শব্দটি প্রাচীন ইংরেজি 'cirice' থেকে এসেছে, যার অর্থ খ্রিস্টান উপাসনার জন্য নির্দিষ্ট স্থান। প্রোটো-জার্মানিক 'কিরিয়াকি' ও গ্রিক 'কিরিয়াকন' ('প্রভুর ঘর') শব্দ থেকে এর উৎপত্তি।

বিভিন্ন ধরণের গির্জা:

  • ক্যাথেড্রাল: এখানে বিশপের আসন থাকে।
  • তীর্থস্থান চার্চ: নিয়মিত তীর্থযাত্রা হয়।
  • প্যারিশ চার্চ: একটি ভৌগোলিক এলাকার জনগণের প্রয়োজন মেটায়।
  • কলেজিয়েট চার্চ: ক্যাননদের দল দ্বারা নিয়মিত উপাসনা পরিচালিত হয়।
  • কনভেন্টুয়াল চার্চ: মঠ বা কনভেন্টের প্রধান গির্জা।

গির্জা ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়: 'গির্জা' শব্দটি কখনও কখনও সমগ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে নির্দেশ করে। তবে, গির্জা কখনও কখনও খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়কেও বোঝায় (যেমন, ক্যাথলিক চার্চ, অর্থোডক্স চার্চ, প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ)।

গির্জা এবং স্থাপত্যের ইতিহাস: রোমানেস্ক শৈলী (১০০০-১২০০), গথিক শৈলী (১১৪০ থেকে), বারোক শৈলী (১৫৭৫ থেকে) এবং রেনেসাঁ-পরবর্তী শৈলী - বিভিন্ন যুগে গির্জার স্থাপত্যে নানা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

বাংলাদেশের গির্জা:

বাংলাদেশে বহু ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ গির্জা রয়েছে। এই গির্জাগুলির স্থাপত্যে ইউরোপীয় শৈলীর সাথে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ দেখা যায়। পর্তুগীজ, ব্রিটিশ ইত্যাদি ঔপনিবেশিকদের আমলে নির্মিত গির্জাগুলিতে এ বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট। আধুনিক বাংলাদেশেও বিভিন্ন শহরে এবং গ্রামে নানা ধরণের গির্জা দেখা যায়।

মূল তথ্যাবলী:

  • খ্রিস্টান উপাসনার প্রাচীনতম স্থান হাউস চার্চ (২৩৩-২৫৬ খ্রিস্টাব্দ)
  • ১১-১৪ শতকে পশ্চিম ইউরোপে গির্জা নির্মাণের জোয়ার
  • গির্জার স্থাপত্যে ক্রুশের আকৃতি, টাওয়ার ও গম্বুজের ব্যবহার
  • 'চার্চ' শব্দের উৎপত্তি প্রাচীন ইংরেজি ও গ্রিক শব্দ থেকে
  • ক্যাথেড্রাল, তীর্থস্থান, প্যারিশ, কলেজিয়েট ও কনভেন্টুয়াল চার্চসহ বিভিন্ন ধরণের গির্জা
  • গির্জার স্থাপত্যে রোমানেস্ক, গথিক, বারোকসহ নানা শৈলী

গণমাধ্যমে - গির্জা

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

দেশের বিভিন্ন গির্জায় প্রার্থনা ও আলোকসজ্জার আয়োজন ছিল।

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

বড়দিন উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশের গির্জাগুলো সাজানো হয়েছে।

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

গাজীপুরের বিভিন্ন গির্জায় বড়দিনের নানা আয়োজন করা হয়েছে।