খেলাস্থল: ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার জগতে ‘হুমগুটি’ খেলার একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের বড়ই আটা বন্দে প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ দিন এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২৬৩ বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলে আসা এই খেলা ‘খেলাস্থল’ কে পরিণত করে জনসমুদ্রে।
এই খেলায় ৪০ কেজি ওজনের পিতলের তৈরি একটি গোলকাকৃতি বস্তু ব্যবহৃত হয় যাকে ‘গুটি’ বলে। এই গুটিকে দুই বা একাধিক দল টেনেহিঁচড়ে নিজেদের দখলে নেয়ার প্রতিযোগিতাই হল হুমগুটি খেলা। খেলায় কোনো নির্দিষ্ট নিয়মকানুন, রেফারি বা বিচারক থাকে না। শত শত খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণে এই গুটি দখলের লড়াই চলে। লক্ষ্মীপুর, দেওখোলাসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি উৎসবের আবহে মেতে ওঠে এই খেলাকে কেন্দ্র করে।
১৭৫৮ সালে মুক্তাগাছার জমিদার রাজা শশিকান্ত ও ত্রিশাল উপজেলার বৈলরের হেমচন্দ্র রায় জমিদারের মধ্যে জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধের সমাধানের জন্য এই খেলার আয়োজন করা হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। বিজয়ী দলের এলাকাকে ‘তালুক’ এবং পরাজিত দলের এলাকাকে ‘পরগনা’ হিসাবে চিহ্নিত করা হতো। মুক্তাগাছা জমিদারের প্রজারা সেই প্রাচীন খেলায় বিজয়ী হয়েছিল।
বর্তমানে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও হুমগুটি খেলার ঐতিহ্য বহমান। মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ সদর ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দল বেঁধে শত শত খেলোয়াড় ও দর্শক এই খেলা দেখতে আসে। একেক এলাকার একেকটি নিশানা থাকে, যার দ্বারা দল চিহ্নিত করা হয়।
হুমগুটি সাংস্কৃতিক ফোরামের পরিচালক এবি ছিদ্দিক ও দেওখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম এর মতামত অনুযায়ী, এই খেলাটি বংশপরম্পরায় চলে আসছে এবং ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে। এই ঐতিহ্যবাহী খেলাকে ঘিরে গ্রামীণ মেলা বসে এবং উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।