খুলনার খালিশপুর উপজেলা: একটি বিস্তারিত ঝলক
খুলনা জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল খালিশপুর। ১৯৮৬ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, এটি ধীরে ধীরে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১২.৩৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ২২°৫০´ থেকে ২২°৫২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩১´ থেকে ৮৯°৩৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে দিঘলিয়া উপজেলা ও দৌলতপুর থানা, দক্ষিণে কোতোয়ালী ও সোনাডাঙ্গা থানা এবং ডুমুরিয়া উপজেলা, পূর্বে রূপসা ও দিঘলিয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে দৌলতপুর থানা ও ডুমুরিয়া উপজেলা থেকে খালিশপুর বেষ্টিত।
জনসংখ্যা ও জনগোষ্ঠী:
২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, খালিশপুরের জনসংখ্যা ছিল ২৩৫০১৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২৮৪৭৪ এবং মহিলা ১০৬৫৪৪ জন। ধর্মীয়ভাবে, অধিকাংশ মানুষই মুসলমান (২২২৫০৩), এছাড়াও হিন্দু (৯১৭১), বৌদ্ধ (৩২৩৭), খ্রিস্টান (৯১) ও অন্যান্য (১৬) ধর্মের মানুষ বসবাস করে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক সম্পদ:
খালিশপুরের প্রধান নদী হল ভৈরব। কৃষিকাজ এই উপজেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি। ধান, পাট, সুপারি, এবং বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে, জাম ও নারিকেল এখানকার উল্লেখযোগ্য ফল। পান, আলু ও নীল বিলুপ্তপ্রায় ফসলের মধ্যে পড়ে।
শিল্প ও অর্থনীতি:
খালিশপুরে জুট মিলস, স্টিল মিল ও কোল্ড স্টোরেজ এর মতো শিল্পকারখানা আছে। নিউজপ্রিন্ট মিল এবং খুলনা হার্ডবোর্ড মিল উল্লেখযোগ্য। অর্থনীতিতে কৃষির পাশাপাশি ব্যবসা, পরিবহন, চাকুরী, নির্মাণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রের অবদান উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
খালিশপুরের শিক্ষার হার ৭৩.৭২%। এখানকার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (প্রতিষ্ঠিত ১৯০৪) অন্যতম। স্বাস্থ্য সেবায় খুলনা মেডিক্যাল হাসপাতাল (বয়রা), ইউসেফ এইচ পি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং অন্যান্য পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র রয়েছে।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলী:
মুক্তিযুদ্ধের সময় খালিশপুরে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল। বৈকালী সিনেমা হল ও বয়রা গার্লস কলেজ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর সংঘর্ষে বহু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ‘মুন্সি বাড়ির ট্রাজেডি’ নামে পরিচিত একটি হত্যাযজ্ঞও এই উপজেলায় ঘটেছিল।
উপসংহার:
খুলনার খালিশপুর উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা, যা কৃষি, শিল্প এবং মানব সম্পদের দিক থেকে সমৃদ্ধ। এর ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম।