কয়লা: বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়
কয়লা, একটি জীবাশ্ম জ্বালানি, প্রাচীনকালের উদ্ভিদের দীর্ঘদিন ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে রূপান্তরিত হয়ে তৈরি হয়। এটি কালো বা গাঢ় বাদামি রঙের খনিজ পদার্থ এবং এর প্রধান ব্যবহার জ্বালানি হিসেবে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এটি ছিল শক্তির প্রধান বাণিজ্যিক উৎস। পেট্রোলিয়াম আবিষ্কারের পর এর ব্যবহার কিছুটা কমে গেলেও, আজও বিশ্বব্যাপী শক্তির উৎস হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
ভারতের কয়লা খনি:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাণীগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র ১৭৭৪ সালে কয়লা উত্তোলনের ইতিহাসের সাক্ষী। এই অঞ্চলের ঝরিয়া, রাণীগঞ্জ, বোকরাও ও করণপুরা কয়লা খনির নাম বিখ্যাত। ১৮৫৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের উদ্বোধনের পর কয়লা উত্তোলন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৯০৩ সালে রাণীগঞ্জের কয়লা খনি ভারতের মোট কয়লা উৎপাদনের ৪১.২% এবং ঝরিয়া এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদন করছিল। আসামের কয়লাক্ষেত্র টারশিয়ারী যুগের শিলাস্তরের সাথে সম্পর্কিত।
বাংলাদেশের কয়লা:
বাংলাদেশে পাঁচটি প্রধান অন্তর্ভূমি কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৮৫৭ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ভূতত্ত্ববিদরা উত্তরাঞ্চলে বিরাট কয়লাক্ষেত্রের অস্তিত্বের সম্ভাবনা ব্যক্ত করেন। ১৯৫৯ সালে স্টানভাক (STANVAC) কোম্পানি বগুড়ার কুচমাতে Kuchma X-1 কূপ খনন করে গন্ডোয়ানা কয়লার সন্ধান পায়। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জি.এস.পি) জামালগঞ্জ-পাহাড়পুর কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কার করে।
স্বাধীনতার পর, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জি.এস.বি) ১৯৮৫ (বড়পুকুরিয়া), ১৯৮৯ (খালাশপীর) এবং ১৯৯৫ (দীঘিপাড়া) সালে কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কার করে। বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্রে ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়, যদিও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। জামালগঞ্জ-পাহাড়পুর কয়লাক্ষেত্রের গভীরতা এবং উত্তোলনের অর্থনৈতিক দিক নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। খালাশপীর ও দীঘিপাড়ার কয়লাক্ষেত্রের বিস্তারিত ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা এখনও অসম্পূর্ণ। ১৯৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্রোকেন হিল প্রোপ্রাইটর দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কয়লা আবিষ্কার করে। উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি নিয়ে সরকার ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। টাকেরঘাট-বাগলিবাজার এলাকায় টারশিয়ারী কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে।
কয়লার ভবিষ্যৎ:
বাংলাদেশের কয়লা সম্পদের সম্ভাবনা বিপুল, কিন্তু উত্তোলন, পরিবেশগত প্রভাব এবং অর্থনৈতিক দিকগুলো বিবেচনা করে সাবধানে পরিকল্পনা প্রয়োজন। সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।