কোরিয়া: দুই রাষ্ট্রের এক ইতিহাস
পূর্ব এশিয়ার কোরীয় উপদ্বীপ দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত - উত্তর কোরিয়া (গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া) এবং দক্ষিণ কোরিয়া (কোরিয়া প্রজাতন্ত্র)। উত্তর কোরিয়ায় একে 'চোসন' (조선) এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় 'হানগুক' (한국) বলা হয়। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের আত্মসমর্পণের ফলে এই বিভাজন ঘটে। এই দুটি রাষ্ট্রের ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিভিন্ন, তবে উভয়েরই একটি সাধারণ ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মূল রয়েছে।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
প্রাচীনকাল থেকেই কোরীয় উপদ্বীপে মানুষের বসতি ছিল। গোজোসন (고조선) নামক একটি রাজ্য প্রাচীন কোরিয়ার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। এর পর তিনটি রাজ্যের আমলে (কোগুরিও, বেকজে, সিল্লা) কোরিয়া বিভক্ত ছিল। পরবর্তীতে সিল্লা রাজ্যের অধীনে কোরিয়া একত্রিত হয়। ৯১৮ সালে গোরিও (고려) রাজবংশের উত্থান ঘটে, যার নাম থেকেই 'কোরিয়া' নামের উৎপত্তি। চৌদ্দ শতকে হোসেয়ান রাজবংশের অধীনে দেশে আপেক্ষিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা দেখা যায়। এই রাজার আমলে হাঙ্গুল বর্ণমালা উদ্ভাবন এবং কনফুসিয়ান নীতি প্রতিষ্ঠা কোরিয়ার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। উনিশ শতকে জাপান কোরিয়ার উপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর:
১৯৪৫ সালে জাপানের পরাজয়ের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়াকে ৩৮তম সমান্তরালরেখা অনুযায়ী বিভক্ত করে। উত্তর অংশ সোভিয়েতদের এবং দক্ষিণ অংশ মার্কিনদের অধীনে চলে যায়। ১৯৪৮ সালে উভয় রাষ্ট্রই স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত কোরীয় যুদ্ধে উভয় দেশ সক্রিয়ভাবে লিপ্ত ছিল।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
কোরীয় উপদ্বীপ পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত। উত্তর-পশ্চিমে চীন, উত্তর-পূর্বে রাশিয়া, পূর্বে জাপান সাগর এবং দক্ষিণে পূর্ব চীন সাগর। উভয় কোরিয়ার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৭৯ লক্ষ (দক্ষিণ কোরিয়া: ৫ কোটি ১৭ লক্ষ; উত্তর কোরিয়া: ২ কোটি ৬১ লক্ষ)। জনসংখ্যা গাঢ়ভাবে কোরীয় জাতিগোষ্ঠীর দ্বারা নির্মিত। তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিদেশীদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অর্থনীতি:
দক্ষিণ কোরিয়া একটি উন্নত দেশ, বিশ্ব অর্থনীতিতে এর অবস্থান উল্লেখযোগ্য। শিল্পায়ন, প্রযুক্তি ও রপ্তানি দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক প্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত, যদিও সাম্প্রতিক কিছু সুধারণী প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে।
কোরিয়ার খ্যাতি:
দক্ষিণ কোরিয়া এর গ্লোবাল প্রভাব বিশেষ ভাবে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দেখা যায়। ক-পপ (K-pop) সংগীত, চলচ্চিত্র এবং টিভি নাটক বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। উত্তর কোরিয়া এর সামরিক ক্ষমতা এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব কোরিয়ার খ্যাতিতে অবদান রাখে।
বিঃদ্রঃ: লেখাটি প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে রচিত। কোরিয়া সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রাপ্ত হলে লেখাটি আপডেট করা হবে।