নোবেলজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী: শিশু অধিকারের অক্লান্ত যোদ্ধা
কৈলাশ সত্যার্থী (হিন্দি: कैलाश सत्यार्थी; জন্ম: ১১ জানুয়ারি, ১৯৫৪) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় শিশু অধিকার কর্মী এবং ২০১৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী। মধ্যপ্রদেশের বিদিশায় জন্মগ্রহণকারী কৈলাশ সত্যার্থী ১৯৯০-এর দশক থেকে ভারতে শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। তিনি 'বাচপান বাঁচাও আন্দোলন' নামক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৮০,০০০-এরও অধিক শিশুকে ক্রীতদাসত্ব ও শিশুশ্রমের কবল থেকে মুক্ত করেছেন এবং তাদের পুনঃমিলন, পুনর্বাসন ও শিক্ষায় সহায়তা করেছেন। মালালা ইউসুফজাইয়ের সাথে যৌথভাবে তাকে শিশু ও তরুণদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ এবং সকল শিশুর শিক্ষার অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
সত্যার্থীর জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল তার নাম পরিবর্তন। তিনি তার আগের উপাধি 'শর্মা' প্রত্যাখ্যান করে 'সত্যার্থী' (সত্যের অনুসন্ধানকারী) নাম গ্রহণ করেন। এই ঘটনার পেছনে ছিল ভারতীয় বর্ণব্যবস্থার বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ। তিনি উচ্চবর্ণের মানুষদের জন্য একটি নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন যেখানে নিম্নবর্ণের মানুষরা রান্না করেছিলেন। উচ্চবর্ণের মানুষরা অনুষ্ঠানে না আসায় এবং এর পরে তাকে গঙ্গায় স্নান করে পাপমোচন করার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করার প্রতিবাদে তিনি এই নাম পরিবর্তন করেন।
শৈশব থেকেই কৈলাশ সত্যার্থী শিশুদের শ্রম ও অধিকারের প্রতি সচেতন ছিলেন। স্কুলের প্রথম দিনে একজন মুচির ছেলেকে স্কুলের বাইরে কাজ করতে দেখে তিনি এর কারণ জানতে চেয়েছিলেন এবং তখনই তার মনে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিজ্ঞা জন্ম নেয়।
বিদিশা সরকার বয়েজ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও সম্রাট অশোক টেকনোলজিকাল ইন্সটিটিউট, বিদিশা থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ভূপালের একটি কলেজে প্রভাষক হিসাবে কাজ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি প্রকৌশলী পেশা ত্যাগ করে বাচপান বাঁচাও আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি 'গ্লোবাল মার্চ অ্যাগেইনস্ট চাইল্ড লেবার' এবং 'গ্লোবাল ক্যাম্পেইন ফর এডুকেশন' এর সাথেও যুক্ত ছিলেন।
সত্যার্থী বহু তথ্যচিত্র, টেলিভিশন সিরিজ, টক শো ও প্রচারের বিষয়বস্তু হয়েছেন। ২০১৭ সালে ইন্ডিয়া টাইমস তাকে ১১ জন মানবাধিকার কর্মীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে যাদের লক্ষ্য অন্যদের সম্মানজনক জীবনযাপন নিশ্চিত করা। তিনি বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
সত্যার্থীর নোবেল পুরস্কার লাভের পর শিশু শ্রমের অবৈধীকরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কিছু মহলের মতে, এতে শিশুশ্রম লুকিয়ে থাকবে এবং মজুরি কমতে পারে। তবে, সত্যার্থীর কাজের ফলে বিশ্বব্যাপী শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
শিশু অধিকার, শিশু শ্রম, নোবেল পুরষ্কার, ভারত, বাচপান বাঁচাও আন্দোলন, কৈলাশ সত্যার্থী