কেয়া কসমেটিকস

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৯:০৬ পিএম

কেয়া কসমেটিকস: উত্থান, পতন ও বিতর্কের ইতিহাস

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড একসময় দেশের জনপ্রিয় প্রসাধনী ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ছিল। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করলেও বিতর্ক, আর্থিক সংকট এবং দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত হয়ে বর্তমানে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

উত্থান ও জনপ্রিয়তা:

কেয়া কসমেটিকস প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন ধরণের সাবান, পেট্রোলিয়াম জেলি, লিপ জেল, ডিটারজেন্ট পাউডার, শেভিং ক্রিম, শ্যাম্পু প্রভৃতি উৎপাদন করে বাজারে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ৯০-এর দশকে মৌ-নোবেল ও শম্মী কায়সারের মতো জনপ্রিয় মডেলদের ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে তারা বাজার দখল করে। বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও ম্যাগাজিনের পৃষ্ঠপোষকতাও তাদের জনপ্রিয়তার অবদান রাখে।

পতনের পথে:

কয়েক বছরের অভূতপূর্ব সাফল্যের পর কেয়া কসমেটিকসের পতন শুরু হয়। প্রধান কারণ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে আসে মালিকপক্ষের কসমেটিকস ব্যবসা থেকে সরে গার্মেন্টস শিল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত, ব্যাংক ঋণের বোঝা, বাজারের অস্থিরতা, এবং কাঁচামালের অপ্রতুলতা। ২০১০-১১ সালে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়া, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা, এবং দুর্নীতির অভিযোগ তাদের আরও দুর্বল করে তোলে। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল খালেক পাঠানের নাম বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকায় উঠে আসে।

বিতর্ক ও আর্থিক সংকট:

কেয়া কসমেটিকসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • হিসাব গরমিল: কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেয়া কসমেটিকসের অ্যাকাউন্টে ৪৯ কোটি ডলার জমা না হওয়ার তদন্ত করেছে।
  • ঋণ খেলাপি: প্রতিষ্ঠানটি বেশিরভাগ ব্যাংকের কাছে ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
  • অবৈধ সম্পদ: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক পাঠানসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলা করেছে।
  • আর্থিক প্রতিবেদন: প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছর ধরে নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছে।
  • কারখানা বন্ধ: ২০২৩ সালে কেয়া গ্রুপের ৪টি পোশাক কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমান অবস্থা:

বর্তমানে কেয়া কসমেটিকস আর্থিক সংকটে জর্জরিত এবং বাজারে ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাদের আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনা ও তদন্ত করছে। প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ কী হবে তা এখনও অনিশ্চিত।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত
  • একসময়ের জনপ্রিয় প্রসাধনী ব্র্যান্ড
  • আর্থিক সংকট ও দুর্নীতির অভিযোগ
  • বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ খেলাপি
  • বিএসইসির তদন্তের মুখে

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - কেয়া কসমেটিকস

এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ৯.৪৩% হ্রাস পেয়েছে।