বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (কৃষি ব্যাংক) কৃষি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী একটি জাতীয় বিশেষায়িত ব্যাংক। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ (নং ২৭) অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংক ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশন এবং ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের উত্তরাধিকারী। প্রাথমিকভাবে এর অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ মিলিয়ন টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩৭০ মিলিয়ন টাকা। বর্তমানে ২০২০ সালের হিসাবে অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে ১৫ বিলিয়ন এবং ৯ বিলিয়ন টাকা।
কৃষি ব্যাংকের মূল লক্ষ্য হলো কৃষির সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। এটি কেবলমাত্র কৃষি ঋণ প্রদানেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং বাণিজ্যিক ব্যাংকের ন্যায় বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবাও প্রদান করে। বৈদেশিক বিনিময় ব্যবসা, বাণিজ্যিক ও কৃষিভিত্তিক শিল্প/প্রকল্প, এসএমই, মাইক্রো ক্রেডিট, কনজ্যুমার ক্রেডিট এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচীতেও এটি ঋণ সহায়তা প্রদান করে। ব্যাংকের ১০৩৮ টি শাখা রয়েছে, যার মধ্যে ৭৯২টি পল্লী শাখা। ১৮টি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় শাখা এবং ৩১২টি বিদেশি প্রতিসংগী ব্যাংকের সাথে যুক্ত। ৯৫টি শাখা ওয়ানস্টপ সার্ভিসের আওতায় রয়েছে।
দেশ স্বাধীনতার পর প্রশাসকের মাধ্যমে ব্যাংক পরিচালিত হতো। ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৯৭৫ সালের মার্চে পরিচালক পর্ষদ গঠন করা হয়। ১৯৮১ সালে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ পৃথক করা হয়। বর্তমানে পরিচালক পর্ষদে চেয়ারম্যানসহ ৬ জন সদস্য রয়েছে। ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে ৭টি বিভাগ রয়েছে।
কৃষি ব্যাংক বিভিন্ন কৃষি কার্যক্রম যেমন শস্য উৎপাদন, সবজি আবাদ, মৎস্যচাষ, গ্রামীণ ও কুটির শিল্পকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। ক্ষুদ্র কৃষকদের ঋণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। শস্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বিপণন, কৃষি সরঞ্জাম ক্রয়, নলকূপ, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি (১৮ মাস), মধ্যমেয়াদি (৫ বছর) এবং দীর্ঘমেয়াদি (৫ বছরের অধিক) ঋণ প্রদান করে।
ব্যাংক বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, যেমন বিশেষ কৃষিঋণ, বিএডিসির সাথে চুক্তিবদ্ধ কৃষি-খামারি, আলু চাষ, চা বাগান, দুগ্ধ খামার, মৎস্যচাষ, গবাদিপশু পালন ইত্যাদি। বার্ষিক প্রায় ১৫ বিলিয়ন টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, কৃষি ঋণের চাহিদা পূরণ, কৃষি খাতের সুদৃঢ়করণ, তহবিলের ভিত্তি মজবুতকরণ ইত্যাদি লক্ষ্য নিয়ে প্রতি অর্থবছর কৃষিঋণ বিতরণ, ঋণ আদায় ও আমানত সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কাজ করে। সাধারণ আমানতের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র সঞ্চয় স্কিমও চালু রয়েছে। ফসল মৌসুমে কৃষকদের দ্রুত ঋণ প্রদান নিশ্চিত করে। ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষীদেরও সহজ শর্তে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।