কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বর্তমান
উলিপুর উপজেলা কুড়িগ্রাম জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা। ৪৫৮.৪৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি ২৫°৩৩´ থেকে ২৫°৪৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৯´ থেকে ৮৯°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাট, দক্ষিণে চিলমারী ও সুন্দরগঞ্জ, পূর্বে রৌমারী ও ভারতের আসাম, এবং পশ্চিমে পীরগাছা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত।
জনসংখ্যা ও গঠন:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উলিপুরের জনসংখ্যা ৩৯৫২০৭ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১৯১০৪১ এবং মহিলা ২০৪১৬৬। ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতায় মুসলিম ৩৬৫২৮৭, হিন্দু ২৯৪২৩, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ১৪, এবং অন্যান্য ৪৮১ জন।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
উলিপুরের ইতিহাস সমৃদ্ধ। ১৯০২ সালে এখানে থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এখানকার বহু মানুষ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন, যার মধ্যে ঋষিকেষ মজুমদার নামক একজন ব্যক্তি কারাবরণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে উলিপুরের চৌমুনী বাজারে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর কনভয় আক্রমণ করেছিল এবং হাতিয়ায় ৭০০ গ্রামবাসীকে পাকবাহিনী হত্যা করেছিল। মন্ডলের হাটে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর সংঘর্ষে ৭জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন। উপজেলায় ৩টি গণকবর ও ৩টি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।
প্রাচীন নিদর্শন:
উলিপুর জামে মসজিদ, পাঁচপীরের ৩ গম্বুজ মসজিদ, সাতদরগাহ জামে মসজিদ, বজরা জামে মসজিদ, কাজী মসজিদ (১২১৪ হিজরী), হোসেন শাহী আমলের মসজিদের শিলালিপি (বরেন্দ্র যাদুঘরে রক্ষিত), সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, শিববাড়ি মন্দির, গোবিন্দ জিউ মন্দির ইত্যাদি প্রাচীন নিদর্শন উলিপুরের ঐতিহ্যের সাক্ষী।
শিক্ষা ও অর্থনীতি:
শিক্ষার হার ৪৫.৬% (পুরুষ ৪৯.৫%, মহিলা ৪২.১%)। ৪টি কলেজ, ৪২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৮৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১০০টি মাদ্রাসা রয়েছে। অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর (৬৯.৪১%)। ধান, পাট, ভুট্টা, চিনাবাদাম, সরিষা, ডাল ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল।
যোগাযোগ:
৭৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৯ কিলোমিটার আধা-পাকা রাস্তা, ৪৩৬ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, ১৬ কিলোমিটার রেলপথ এবং ৫২ কিলোমিটার নৌপথ উলিপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অবদান রাখে।
উল্লেখযোগ্য স্থানসমূহ:
উলিপুর, দুর্গাপুর, বকশীগঞ্জ, মন্ডলহাট, বুড়াবুড়ি, অনন্তপুর, পান্ডুল, থেতরাই ও বজরা হাট এবং হাতিয়ার তাজিয়া মেলা ও সিদ্ধেশ্বরী মেলা উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে:
উলিপুরের সব ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন, তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ 18.9%। পানীয়জলের প্রধান উৎস নলকূপ, কিন্তু অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য ১৩টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ১টি মাতৃসদন, এবং ১টি চক্ষু হাসপাতাল রয়েছে। ব্র্যাক, আশা, আলোর পথে ইত্যাদি এনজিও এখানে কাজ করে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য পরবর্তীতে আরও আপডেট করা হবে।