কুলিয়ারচর: কিশোরগঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত কুলিয়ারচর উপজেলা একটি উল্লেখযোগ্য প্রশাসনিক অঞ্চল। ১০৪.০১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ২৪°০৬´ থেকে ২৪°১৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৯´ থেকে ৯০°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে বাজিতপুর, দক্ষিণে বেলাবো ও ভৈরব, পূর্বে ভৈরব ও বাজিতপুর, এবং পশ্চিমে কটিয়াদী ও বেলাবো উপজেলার সাথে এর সীমানা।
জনসংখ্যা ও জনমিতি: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কুলিয়ারচরের জনসংখ্যা ১৮২২৩৬, যার মধ্যে পুরুষ ৮৭৯৫৫ এবং মহিলা ৯৪২৮১। ধর্মীয়ভাবে, ১৬৯৬৮৪ জন মুসলিম, ১২৪২৮ জন হিন্দু, এবং অতি সামান্য সংখ্যক বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান বাসিন্দা রয়েছে।
প্রশাসন: ১৯২১ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় কুলিয়ারচর, এবং ১৯৮৪ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: কুলিয়ারচরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর বাড়ি (কাপাসহাটিয়া), গোসাইর আখড়া (রামদি), এবং দাসপাড়া কালীবাড়ি (কুলিয়ারচর) এর উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে ৪ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং ২৮ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। মধ্য-সালুয়া, ভাঙারঘাট, ফকিরপাড় প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উপজেলা সদরে ‘স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ’ স্থাপিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করার জন্য।
অর্থনীতি: কৃষি কুলিয়ারচরের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। ৫২.৯৫% লোক কৃষিকাজে নিয়োজিত। ব্যবসা, পরিবহন, চাকরি, শিল্প প্রভৃতি অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধান, গম, বাদাম, সরিষা, আলু, কচু এবং বিভিন্ন শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। আম, কলা, লিচু, কাঁঠাল এখানকার প্রধান ফল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে। মাছ, কলা, লিচু, এবং শাকসবজি এখানকার প্রধান রপ্তানিদ্রব্য।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: কুলিয়ারচরের গড় শিক্ষার হার ৪৪.৬%। কুলিয়ারচর ডিগ্রি কলেজ, লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বি এম কলেজ, আগরপুর জি সি উচ্চ বিদ্যালয়, এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র, এবং কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।
যোগাযোগ: কুলিয়ারচরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় রয়েছে পাকা, আধাপাকা এবং কাঁচা রাস্তার নেটওয়ার্ক। এছাড়াও রেলপথও রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ১৯১৮ সালের ভূমিকম্প এবং ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ কুলিয়ারচরকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করেছিল।
উল্লেখযোগ্য এনজিও: ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা প্রভৃতি এনজিও কুলিয়ারচরে কাজ করে।
বিঃদ্রঃ এই লেখাটি প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে লিখিত। আরও বিস্তারিত তথ্য উপলব্ধ হলে লেখাটি সম্পূর্ণ করা হবে।