কুমিল্লার চান্দিনা

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৭ পিএম

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা: ঐতিহাসিক গौरব ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমন্বয়

বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা হল চান্দিনা উপজেলা। উত্তরে দাউদকান্দি, মুরাদনগর ও দেবীদ্বার, দক্ষিণে বরুড়া ও চাঁদপুর জেলার কচুয়া, পূর্বে বুড়িচং, বরুড়া ও কুমিল্লা আদর্শ সদর, এবং পশ্চিমে দাউদকান্দি ও কচুয়া উপজেলার সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত এই উপজেলা। বর্তমানে এখানে ১টি পৌরসভা এবং ১৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। ১৮৭৬ সালে চান্দিনা থানা সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। উপজেলার আয়তন ২০১.৯২ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় ৩,৫৮,৮২০ জন।

চান্দিনার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। ১৬৭৫ সালে মির্জা হোসেন আলী খাঁ মোগল সুবাদার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর বর্তমান চান্দিনায় সদর দপ্তর স্থাপন করেন। তখন এ স্থানের নাম ছিল ‘বরকামতা’। জঙ্গলের কারণে বাঘের আতঙ্কে লোকেরা ভীত থাকত। সুবাদার হোসেন আলী খাঁ তাঁর মহলের সামনে বাঘ ভয় দেখানোর জন্য একটি উঁচু স্থানে উজ্জ্বল গ্যাসের বাতি জ্বালাতেন। এতে স্থানটি ‘চাঁদনী’ বা ‘চাঁদের আলোর মতো স্থান’ নামে পরিচিত হয় এবং পরে ইংরেজ শাসনামলে চান্দিনা নামকরণ হয়।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব: চান্দিনা উপজেলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে রয়েছে রাজকাচারি, কালীমন্দির, হযরত হোবরে আলী শাহ (র.) মাযার (আড়িখোলা) এর মত প্রাচীন নিদর্শন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চান্দিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে; ১১ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১৪০০ পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে। ১২ ডিসেম্বর কটতলায় যুদ্ধে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ফাউইতে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ২৩ জন আহত হন। উপজেলায় দুটি বধ্যভূমি ও তিনটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: চান্দিনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অসাধারণ। ঘোগরার বিল এর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ৫০-৬০ প্রজাতির দেশি মাছ, বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও পাখি, শাপলা, শৈবাল, কচুরিপানা, ইত্যাদি এ বিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।

অর্থনীতি ও উন্নয়ন: কৃষি চান্দিনার অর্থনীতির মূল ভিত্তি। ধান, গম, আলু, সরিষা, শাকসবজি, আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপে ইত্যাদি প্রধান ফসল ও ফল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে। টেক্সটাইল মিল, রাইস মিল, আটাকল, তেলকল, হিমাগার ইত্যাদি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ ইত্যাদি কুটিরশিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

শিক্ষা: কৈলাইন তুলপাই উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), চান্দিনা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), দোল্লাই নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৯) এর মত উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উপজেলার স্বাক্ষরতা হার ৫১%।

উপসংহার: ঐতিহাসিক গৌরব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উন্নয়নের সমন্বয় চান্দিনাকে অনন্য করে তুলেছে। এই উপজেলার অগ্রগতির জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • চান্দিনা উপজেলা কুমিল্লা জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।
  • ১৮৭৬ সালে চান্দিনা থানা সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত।
  • ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চান্দিনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
  • ঘোগরার বিল চান্দিনার প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।
  • কৃষি চান্দিনার অর্থনীতির মূল ভিত্তি।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - কুমিল্লার চান্দিনা

১৮ আগস্ট ১৯৪৩

প্রবীর মিত্রের জন্মস্থান।

১৮ আগস্ট ১৯৪৩, ৬:৩০ এএম

প্রবীর মিত্র কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।