কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। ১৯০৬ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। এর আয়তন ১৩৯.৩২ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ (২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে)। ভৈরবের উত্তরে বাজিতপুর, দক্ষিণে রায়পুরা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, পূর্বে সরাইল এবং পশ্চিমে কুলিয়ারচর ও বেলাবো উপজেলা অবস্থিত।
ভৈরবের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, চীনাবাদাম, সরিষা, আলু প্রভৃতি ফসল এখানে উৎপাদিত হয়। এছাড়াও মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। শিল্পক্ষেত্রে জুটমিল, রাইসমিল, বিস্কুট ও সাবান কারখানা উল্লেখযোগ্য। কুটির শিল্পের মধ্যে স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভৈরব বাজার, শিমুলকান্দি বাজার, গজারিয়া বাজার প্রভৃতি এখানকার গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজার।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে ভৈরব বেশ সমৃদ্ধ। হাজী আসমত কলেজ (১৯৪৭), ভৈরব টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (১৯৮০) এবং রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজ (১৯৮৭) উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা রয়েছে।
ভৈরবের ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর উপর ভৈরবের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অসামান্য ছিল। ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল পাকবাহিনীর বর্বরতায় ৪০০ এর অধিক নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ১৩ ডিসেম্বর তারা ভৈরব রেলসেতু ধ্বংস করে। ১৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ভৈরব মুক্ত হয়। এই দিনটি এখন ভৈরব মুক্তি দিবস হিসেবে পালিত হয়। নীলকুঠি (শিমুলকান্দি), ইমামবাড়ি (শিমুলকান্দি) প্রভৃতি প্রাচীন নিদর্শন এখানকার ঐতিহ্য বহন করে।
ভৌগোলিকভাবে ভৈরব মেঘনা ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত। বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু (বর্তমানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু নামে পরিচিত), ভৈরব রেলসেতু এবং মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেন ভৈরবের দর্শনীয় স্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে ভৈরব সড়ক, রেলপথ ও নৌপথে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরের সাথে যুক্ত। সম্প্রতি ভৈরবের উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আরো বিস্তারিত তথ্য সংযুক্ত করা হবে।