কাসিম: একাধিক ব্যক্তি ও ঘটনার সমন্বয়ে গঠিত একটি নাম
‘কাসিম’ নামটি একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং ঘটনার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। এই লেখাটিতে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাসিম সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে।
১. কাসিম খান চিশতি (১৬১৪-১৬১৭): মুগল সুবাহদার। তাঁর উপাধি ছিল মুহতাসিম খান। ইসলাম খান চিশতির ছোট ভাই হিসেবে তিনি ১৬১৪ সালে বাংলার সুবাহদারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন কলহপ্রবণ ও স্বেচ্ছাচারী স্বভাবের। ১৬১৩ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও, মে মাসেই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিন বছর শাসনকালে তেমন উল্লেখযােগ্য সাফল্য ছিল না। দীউয়ান মির্জা হুসাইন বেগের সাথে দ্বন্দ্ব, অন্যায় আচরণের জন্য কর্মকর্তাদের বৈরীতা, কুচবিহার ও কামরূপের রাজাকে বন্দি করা, কাছাড় অভিযানের ব্যর্থতা, বীরভুম, পাচেট, হিজলি ও চন্দ্রকোনার জমিদারদের বিরুদ্ধে অভিযান, আরাকান ও পর্তুগিজের যুক্ত আক্রমণ এবং আসাম আক্রমণের ব্যর্থতা - এ সকল ঘটনাই কাসিম খানের শাসনকালকে চিহ্নিত করে। সামরিক ব্যর্থতার কারণে ১৬১৭ সালে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়।
২. কাসিম খান জুইনি (১৬২৮-১৬৩২): বাংলার সুবাহদার। সম্রাট শাহজাহান তাঁকে এই পদে নিয়োগ দেন। মীর মুরাদের পুত্র কাসিম খান ইসলাম খান চিশতির আমলে বাংলার খাজাঞ্চি ছিলেন। তার শাসনকালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল পর্তুগিজদের নিকট থেকে হুগলি দখল। হুগলির অবরোধ এবং পর্তুগিজদের হটিয়ে নেওয়ার পর ১৬৩২ সালে কাসিম খান জুইনির মৃত্যু হয়।
৩. মীর কাসিম (পুরো নাম মীর মুহম্মদ কাসিম আলী খান): (মৃত্যু ৮ মে, ১৭৭৭) ১৭৬০ থেকে ১৭৬৩ সাল পর্যন্ত বাংলার নবাব। পলাশীর যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাঁকে ক্ষমতায় বসায়। ইংরেজদের শোষণের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদী ছিলেন। বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রামের রাজস্ব কোম্পানিকে প্রদান করেন। মুঙ্গেরে রাজধানী স্থানান্তর, জমি জরিপ ব্যবস্থার সংস্কার, নতুন ভূমি কর প্রবর্তন - এগুলি তার উল্লেখযোগ্য কাজ। ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হন। পরাজয়ের পর তিনি নিরুদ্দেশ হন এবং দারিদ্র্যের মধ্যে ১৭৭৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
৪. ইমাদুদ্দীন মুহাম্মদ বিন কাসিম আস সাকাফি (৬৯৫-৭১৫): উমাইয়া সেনাপতি ও মুসলিম বিজেতা। সিন্ধু এবং মুলতান জয় করে তা উমাইয়া খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত করেন। ৭১২ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে রাজা দাহিরকে পরাজিত করেন। তার সিন্ধু বিজয় মুসলিমদের জন্য ভারত বিজয়ের পথ প্রশস্ত করে।
৫. কাসিম ইবনে মুহাম্মদ (মৃত্যু ৬০৫): মুহাম্মদ (সাঃ) এবং খাদিজার সন্তান। দ্বিতীয় জন্মদিনের পূর্বেই মারা যান।
উপরোক্ত আলােচনা থেকে স্পষ্ট, ‘কাসিম’ নামটি বিভিন্ন যুগের, বিভিন্ন পরিচয় ও বিভিন্ন ঘটনার সাথে যুক্ত। আরো তথ্য পাওয়া গেলে এই লেখাটি আপডেট করা হবে।