কামরুন নাহার: একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদী
কামরুন নাহার বাংলাদেশের একজন অত্যন্ত সম্মানিত মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদী। তিনি জৈব জ্বালানী গবেষণায় তার বিশেষ অবদানের জন্য সুপরিচিত। তার গবেষণা বাংলাদেশের ঘরোয়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জৈব জ্বালানীর উন্নত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করেছে। কম কার্বন ও সালফার নিঃসরণকারী জৈব জ্বালানী উৎপাদনের মাধ্যমে তিনি বিদেশী তেলের উপর নির্ভরতা কমাতে কাজ করে যাচ্ছেন।
১৯৬১ সালে কুমিল্লার মুন্সীবাড়িতে জন্মগ্রহণকারী কামরুন নাহারের বড় ভাই জনপ্রিয় লেখক সালেহ উদ্দিন। ইডেন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭৮ সালে তিনি ডঃ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্বাবধানে মৃত্তিকা রসায়ন বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৮১ সালে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে বি.এস এবং ১৯৮২ সালে মাটি রসায়নে এম.এস ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছর তিনি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রথম শ্রেণীর সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৮১ সালে মুহাম্মদ শহীদ সরওয়ারের সাথে তার বিবাহ হয়।
১৯৯৭ সালে তিনি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভ্রাম্যমাণ পণ্ডিত হিসেবে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির নির্বাচিত সদস্য এবং ২০০৩ সালে বাংলাদেশ পরিবেশগত পেশাদারদের ইনস্টিটিউটের সচিব ছিলেন। বর্তমানে তিনি উত্তর-দক্ষিণ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।
কামরুন নাহারের গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ফলের উৎপাদনে জলের ঘাটতির প্রভাব, বিশেষ করে বিশ্ব ক্ষুধা দূরীকরণের উপায়, জৈব জ্বালানী ও খাদ্য উৎপাদন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরণের মাটিতে জৈব জ্বালানী উৎপাদন উপযোগী ফসলের উপযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তিনি জাইট্রোফা কার্কাস L. নামক একটি জৈব জ্বালানী ফসলের বাংলাদেশে চাষাবাদ উপর গুরুত্ব প্রদান করেছেন, যা খাদ্য উৎপাদনের সাথে প্রতিযোগিতা করে না এবং উর্বর ভূমির প্রয়োজন হয় না। তার গবেষণায় কার্বন গ্রাস করার ক্ষমতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে জৈব জ্বালানীর ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।