ঢাকা মহানগরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ থানা হল কদমতলী। ২০০৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর শ্যামপুর ও ডেমরা থানার অংশবিশেষ নিয়ে কদমতলী থানা গঠিত হয়। এর আয়তন ১০.১৬ বর্গ কিমি এবং অবস্থান ২৩°৩৯´ থেকে ২৩°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৬´ থেকে ৯০°২৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। উত্তরে যাত্রাবাড়ী থানা, দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ সদর ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে ডেমরা থানা এবং পশ্চিমে শ্যামপুর ও যাত্রাবাড়ী থানা এর সীমান্তবর্তী। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কদমতলীর জনসংখ্যা ছিল ৩৩০৫৬৫ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১৮৩১৬৯ এবং মহিলা ১৪৭৩৯৬ জন। ধর্মীয়ভাবে, ৩২২৫৭৪ জন মুসলিম, ৭৮৫৬ জন হিন্দু, এবং অল্প সংখ্যক বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান বাসিন্দা রয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদী কদমতলী থানার একটি উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
কদমতলীর ঐতিহাসিক গুরুত্বও অস্বীকার করা যায় না। এখানে শনির আখড়া ও শনি মন্দির (১১৯১ খ্রিষ্টাব্দ) এবং শ্রী শ্রী বঙ্কবিহারী রাধারানী জিউর মন্দির (১২০০ বঙ্গাব্দ) যেসব প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ এলাকার ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে। এছাড়াও, ৫৫টি মসজিদ এবং ২টি মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত। বায়তুল নাজাত মসজিদ ও মুজাহিদনগর মসজিদ উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষার দিক থেকে কদমতলী মোটামুটি উন্নত। শিক্ষার গড় হার ৬৩.৮৭% (পুরুষ ৬৭.২৮%, মহিলা ৫৯.৫৩%)। এখানে ৪টি কলেজ, ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, এ.কে. হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, শ্যামপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
অর্থনীতির দিক থেকে, শিল্প, ব্যবসা, পরিবহন ও যোগাযোগ, এবং চাকুরি কদমতলীর জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস। পোশাকশিল্প, বক্স-কার্টুন কারখানা, টেলিভিশন ফ্যাক্টরি, জুতা কারখানা, দিয়াশলাই শিল্প, রাবার ও প্লাস্টিক শিল্প, ফার্নিচার কারখানা প্রভৃতি শিল্প কারখানা কদমতলীর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কদমতলী শিল্প এলাকা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কদমতলীতে হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।
ঢাকা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, পাগলা পয়ঃশোধনাগার, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির সাবস্টেশন, তিতাস গ্যাস সঞ্চালন কেন্দ্র, শ্যামপুর লঞ্চ টার্মিনাল, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু (প্রথম) কদমতলীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কদমতলী থানার সকল ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন, তবে ৯৬.৭১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা মোটামুটি ভাল। মাতুয়াইল মাতৃসদন ইনস্টিটিউট এবং শ্যামপুর পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বিআরডিবি, ব্র্যাক, আশা প্রভৃতি এনজিও এখানে কাজ করে।