ওসামা বিন লাদেন: বিশ্ব ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়
ওসামা বিন মুহাম্মদ বিন আওয়াদ বিন লাদেন (১০ মার্চ, ১৯৫৭ - ২ মে, ২০১১) ছিলেন একজন সৌদি আরবের ধনকুবের পরিবারের সদস্য, যিনি আল-কায়েদা নামক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও আমির ছিলেন। তাঁর জন্ম সৌদি আরবের রিয়াদে। তার পিতা, মুহাম্মদ বিন আওয়াদ বিন লাদেন, একজন ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত ধনকুবের এবং সৌদি বিনলাদিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ওসামা বিন লাদেনের শিক্ষা জীবন শুরু হয় সৌদি আরবের অভিজাত স্কুল, আল-ছাগের মডেল স্কুলে। পরবর্তীতে তিনি কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসনে পড়াশোনা করেন। তবে, তাঁর শিক্ষা জীবনের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। কিছু তথ্য অনুযায়ী, তিনি ১৯৭৯ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ এবং আবার কেউ কেউ বলেন ১৯৮১ সালে লোক প্রশাসনে ডিগ্রি অর্জন করেন। অন্যদিকে, অনেকের মতে তিনি কোন ডিগ্রীই অর্জন করেননি।
১৯৭৯ সালে, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে চলা যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি আফগানিস্তানে যান। সেখানে মুজাহিদীনদের সাথে যোগ দিয়ে তিনি সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এই সময়েই তার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে জড়িততার সূচনা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি আল-কায়েদা গঠন করেন। ১৯৯০ এর দশকে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমানভাবে বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং ১৯৯৮ সালে মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এফবিআই তাকে দশ মোস্ট ওয়ান্টেড পলাতকের তালিকায় লিপিবদ্ধ করে। তার নেতৃত্বে আল-কায়েদা বিশ্বব্যাপী অনেক সন্ত্রাসী হামলা চালায়।
সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ছিল ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের বিমান হামলা। এই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়। এই ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে। এরপর এক দশকব্যাপী অনুসন্ধানের পর ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর অভিযানে তিনি নিহত হন। তার মৃতদেহ আরব সাগরে সমাহিত করা হয়।
ওসামা বিন লাদেনের জীবন ও কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক স্তরে বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে তাঁকে আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজন যুদ্ধনায়ক হিসেবে দেখা হয়। অন্যদিকে, বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী নিন্দিত। তাঁর মতাদর্শ ও কার্যকলাপের ফলে বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ একটা প্রধান সমস্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।