ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা

বাংলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলা এক সময় ছিল শিশু-কিশোরদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই খেলাগুলোতে সীমিত সংস্থান ব্যবহার করে খোলা মাঠ, উঠান, বাড়ির আশেপাশেই খেলা হতো। নগরায়ণ ও আধুনিক জীবনযাত্রার প্রভাবে অনেক খেলাই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে কিছু কিছু খেলা এখনও টিকে আছে।

  • *কাবাডি:** বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি একসময় গ্রামীণ অঞ্চলের প্রধান খেলা ছিল। ১৯৭৮ সালে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৮০ সালে কলকাতায় প্রথম এশিয়ান কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
  • *এক্কাদোক্কা:** মেয়েদের জনপ্রিয় খেলা এক্কাদোক্কা। মাটির ভাঙা হাড়ি বা কলসির টুকরা দিয়ে তৈরি ঘুটি দিয়ে খেলা হয়। অঞ্চলভেদে খেলার নিয়মে কিছু ভিন্নতা আছে।
  • *গোল্লাছুট:** কিশোর-কিশোরীদের জনপ্রিয় খেলা গোল্লাছুট ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, খুলনা, পাবনা প্রভৃতি জেলায় বেশ প্রচলিত। দুই দল নিয়ে খেলা হয়।
  • *ডাংগুলি:** বাংলাদেশ ও উত্তর ভারতের জনপ্রিয় খেলা। উত্তর ভারতে এর নাম গোলি ডাণ্ডা। ক্রিকেটের আগমনের পর জনপ্রিয়তা কমেছে। অঞ্চলভেদে নামের ভিন্নতা আছে।
  • *রাজা-চোর-মন্ত্রী-সিপাহী:** ছেলে-মেয়েদের খেলা। চারজন খেলোয়াড়ের দরকার হয়। রাজা, মন্ত্রী, চোর ও সিপাহীর পয়েন্ট নির্ধারিত থাকে।
  • *মার্বেল:** কমপক্ষে দুইজন খেলোয়াড় দিয়ে খেলা হয়। সমতল ভূমি প্রয়োজন। রেখা এবং গর্ত করে খেলা হয়।
  • *ওপেন টু বাইস্কোপ:** মেয়েদের জনপ্রিয় খেলা। ছড়া-গানের সঙ্গে জড়িত। দল গঠন করার জন্য খেলা হয়।
  • *কড়ি খেলা:** মেয়েদের খেলা। পাটখড়ি বা খেজুরের বিচি দিয়ে তৈরি কড়ি দিয়ে খেলা হয়।
  • *লাঠি খেলা:** বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী মার্শাল আর্ট। ব্রিটিশ শাসনামলে জমিদাররা নিরাপত্তার জন্য লাঠিয়ালদের রাখত।
  • *কুতকুত:** গ্রামীণ কিশোরী-তরুণীদের খেলা। মাটির ভাঙা তৈজসপত্র দিয়ে ঘর বানিয়ে খেলা হয়।
  • *ষাঁড়ের লড়াই:** এক সময় বাংলাদেশে জনপ্রিয় ছিল। শুকনো মৌসুমে গ্রামের বাজারে ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজন করা হতো। বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়।
  • *বউচি:** গ্রামীণ খেলা। দুটি দল নিয়ে খেলা হয়। বউকে ধরার মাধ্যমে খেলা হয়।
  • *জব্বারের বলীখেলা:** চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে ১২ই বৈশাখে অনুষ্ঠিত কুস্তি প্রতিযোগিতা। ১৯০৯ সালে আবদুল জব্বার সওদাগরের উদ্যোগে শুরু হয়।
  • *টোপাভাতি:** গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের খেলা। রান্নার খেলা।
  • *দাড়িয়াবান্ধা:** জাতীয় খেলা হাডুডুর মতোই জনপ্রিয়। মাটিতে দাগ কেটে ঘর তৈরি করে খেলা হয়।
  • *মোরগ লড়াই:** ছেলেদের খেলা। একপায়ে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে মারামারি করে খেলা হয়।
  • *লাটিম:** লাটিম তৈরির জন্য পেয়ারা ও গাব গাছের ডাল ব্যবহার করা হয়। বেল্লাপার, ঘরকোপ, ঘুরতি কোপ এই তিন ধরনের লাটিম খেলা হয়।
  • *লুডু:** ঘরের বিছানায় অথবা মাটিতে মাদুর পেতে কৈশোর অতিক্রান্ত ছেলে মেয়েরা খেলে।
  • *ষোল গুটি:** গ্রামীণ পুরুষদের খেলা। মাটিতে দাগ কেটে শুকনো ডাল ভেঙ্গে গুটি বানিয়ে খেলা হয়।
  • *নুনতা:** গ্রাম-গঞ্জের শিশু/ কিশোরদের খেলা। বৃত্তাকার ঘর বানিয়ে খেলা হয়।
  • *নৌকাবাইচ:** নদীতে নৌকা চালনার প্রতিযোগিতা।
  • *পুতুল খেলা:** গ্রামীণ শিশুদের জনপ্রিয় খেলা। মেয়েরা বেশি খেলে।
  • *ফুল টোকা:** গ্রামীণ শিশু-কিশোরদের খেলা। ফুল অথবা ফলের নাম রেখে খেলা হয়।
  • *বাঘ ছাগল খেলা:** শিশুদের খেলা। মাটিতে বৃত্ত তৈরি করে খেলা হয়।
  • *ইচিং বিচিং:** শিশু ও কিশোরীদের খেলা। উচ্চতা অতিক্রম এই খেলার বৈশিষ্ট্য।
  • *কানামাছি:** শিশু-কিশোরদের খেলা। একজনের চোখ বেঁধে অন্যদের ধরার চেষ্টা করা হয়।
  • *এলাটিং বেলাটিং:** মেয়েদের খেলা। ছড়া-গানের সঙ্গে জড়িত।
  • *ঘুড়ি:** বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় খেলা। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে গ্রামে বেশ জনপ্রিয়।
  • *গাইগোদানি:** রাখাল ছেলেদের খেলা। ঘাস কাটার পাচুন দিয়ে খেলা হয়।
  • *পানি ঝুপ্পা:** ছেলেদের খেলা। পানিতে মাটির চাড়া ছুঁড়ে মারা হয়।
  • *গোলাপ-টগর:** অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েদের খেলা। ফুলের নাম বলে চোখ বন্ধ করে টোকা দেওয়া হয়।

এই খেলাগুলো বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং এগুলোর অনেকগুলোই আজ বিলুপ্তপ্রায়।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলাধুলা নগরায়নের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে।
  • কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা।
  • এক্কাদোক্কা মেয়েদের জনপ্রিয় খেলা।
  • গোল্লাছুট, ডাংগুলি, লাঠি খেলা, জব্বারের বলী খেলা প্রভৃতি খেলা অতীতে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
  • অনেক খেলার সাথে ছড়া গান জড়িত।
  • অনেক খেলা আজ বিলুপ্তপ্রায়।

গণমাধ্যমে - ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা

ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলা পঞ্চগড়ে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।