এজেন্সি পার্সপেক্টিভ: বাংলায় ইউরোপীয় বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান
ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। ১৭৬০-এর দশকে, কোম্পানির অপর্যাপ্ত জনবল ও পুঁজির অভাবে বাড়তে থাকা বাণিজ্যের চাহিদা পূরণে, তারা সীমিত সংখ্যক ইউরোপীয় ব্যবসায়ীকে লাইসেন্স প্রদান করে। এই লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীরা ‘মুক্ত বণিক’ নামে পরিচিত ছিলেন। তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দস্তক কিনে বাংলার অভ্যন্তরীণ ব্যবসায় জড়িত হয়। ১৭৬৭ সালে এই সুবিধাযুক্ত ব্যবস্থা বন্ধ হলেও, বাংলার পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মুক্ত বণিকদের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে তোলে। ১৭৭৫ সাল থেকে কোম্পানির নতুন বাণিজ্যিক নীতিও এদের জন্য নতুন সুযোগের সৃষ্টি করে।
এই মুক্ত বণিকদের অনেকেই এজেন্সি হাউস নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। প্রাথমিকভাবে, তাদের প্রধান কাজ ছিল কোম্পানির কর্মচারীদের সঞ্চিত অর্থ সংগ্রহ করে লাভজনক ব্যবসায় বিনিয়োগ করা। বাংলার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও চীনের সাথে বাণিজ্য তাদের মূল মুনাফার উৎস ছিল। তারা কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে পণ্য সংগ্রহ, জাহাজে তোলা ও খালাস, অসৎ উপায় অর্জিত অর্থ পাঠানো, ইংরেজদের জমানত ও মূলধন বিনিয়োগ ইত্যাদি কাজেও জড়িত ছিল।
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে, বিশেষ করে ১৮১৩ সালের পর, ব্রিটিশ ভারতে অবাধ বিশ্ব বাণিজ্য শুরু হলে এজেন্সি হাউসগুলো আফিম, নীল, জাহাজনির্মাণ, উপকূলীয় বাণিজ্য, ব্যাংকিং, বীমা, বাষ্পীয় পোত চলাচল, ঢালাই কারখানা প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কার্যকলাপ সম্প্রসারিত করে। ১৭৭৫ সালে মাত্র পাঁচটি এজেন্সি থাকলেও ১৭৯০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় পনেরোতে এবং ১৮১৩ সালে ৩২ টিতে। এই এজেন্সিগুলির অধিকাংশই ব্রিটিশ, বিশেষ করে স্কটিশ-ব্রিটিশ আমলা ও সামরিক কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত ছিল। ১৮৩০-এর দশকে আনুষ্ঠানিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উত্থানের সাথে সাথে এজেন্সি হাউসের প্রভাব কমতে শুরু করে। এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃতপক্ষে পূর্ববর্তী এজেন্সি হাউসগুলোর পরিবর্তিত রূপ ছিল।
Key Information List: এজেন্সি হাউসগুলির উত্থান; লাইসেন্স প্রাপ্ত মুক্ত বণিকদের ভূমিকা; বাংলার বৈদেশিক বাণিজ্য; ১৭৬০ থেকে ১৮৩০-এর দশকের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি; এজেন্সি হাউসের কার্যক্রম সম্প্রসারণ; বেনিয়া প্রতিষ্ঠানের অবক্ষয়; আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উত্থান।