এক সন্তান নীতি

আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০০ এএম

এক সন্তান নীতি (চীনা: 一孩政策; ফিনিন: Yī Hái Zhèngcè) ১৯৭৯ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত চীনে বাস্তবায়িত একটি জনসংখ্যা পরিকল্পনা ছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতে বহু পরিবারকে একটি সন্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল। এই নীতিটি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিস্তৃত প্রচেষ্টার অংশ ছিল, যা ১৯৭০ সালে শুরু হয়েছিল এবং ২০২১ সালে শেষ হয়েছিল। এতে বিবাহ ও সন্তানধারণের ন্যূনতম বয়স, দুই সন্তানের সীমা (পরে তিন ও অবশেষে সীমা তুলে দেওয়া হয়), জন্মের মধ্যে ব্যবধান, কঠোর নজরদারি, এবং অমান্যতার জন্য কঠোর জরিমানা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই নীতির ব্যাপক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত প্রভাব ছিল, যদিও এক সন্তান নীতির অবদান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

চীনের পরিবার পরিকল্পনা নীতি ১৯৭০-এর দশকে অত্যধিক জনসংখ্যার ভয়ে শুরু হয়। কর্মকর্তারা বিয়ের বয়স বাড়িয়ে দেন এবং দম্পতিদের কম সংখ্যক সন্তানের জন্য আহ্বান জানান। ১৯৮০ সালে সর্বজনীন এক সন্তান নীতি জারি করা হয় এবং ১৯৮২ সালে চীনের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিছু ব্যতিক্রম ছিল, যেমন গ্রামীণ পরিবারের প্রথম সন্তান কন্যা হলে দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো। ২০১৫ সালে সরকার এক সন্তান নীতি তুলে দিয়ে দুই সন্তান নীতি প্রবর্তন করে, এবং ২০২১ সালে তিন সন্তান নীতিতে পরিবর্তন করে। জুলাই ২০২১ এ সমস্ত সীমা এবং জরিমানা তুলে দেওয়া হয়।

এক সন্তান নীতি বাস্তবায়ন করেছিল জাতীয় জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কমিশন (National Population and Family Planning Commission)। প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে নীতি মেনে চলতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। শাস্তি অনেক ক্ষেত্রে ছিল কঠোর, যেমন জোরপূর্বক গর্ভপাত, বন্ধ্যাকরণ, এবং ভারী জরিমানা।

এই নীতির প্রভাব অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল, বিশেষ করে চীনের নারীদের উপর। ছেলে সন্তানের প্রতি পুরুষতান্ত্রিক আগ্রহের কারণে অনেক কন্যা শিশুকে ত্যাগ করা হয়েছিল বা হত্যা করা হয়েছিল। এর ফলে লিঙ্গ অনুপাতে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছিল। তবে, এই নীতির ফলে নারীরা কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বেড়েছে এবং কিছু কন্যা শিশু উন্নত শিক্ষা লাভ করেছে।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (CCP) এই নীতির ফলে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছে বলে দাবি করে এবং ৪০ কোটি জন্ম রোধ হয়েছে বলে দাবি করে, যদিও অনেকেই এই দাবীতে সন্দিহান। পশ্চিমে এই নীতির মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।

এই নীতি ২০২১ সালে বাতিল হলেও, তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব চীনের জনসংখ্যা গঠনে, লিঙ্গ অনুপাতে, এবং বৃদ্ধাশ্রয়ের পরিস্থিতিতে লক্ষণীয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৭৯ সালে চীনে এক সন্তান নীতি চালু করা হয়।
  • জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হয়।
  • ২০১৫ সালে দুই সন্তান, ২০২১ সালে তিন সন্তান এবং ২০২১ সালে সকল সীমা তুলে দেওয়া হয়।
  • নারীদের উপর এই নীতির ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
  • মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে।
  • চীনের জনসংখ্যা গঠন এবং অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - এক সন্তান নীতি