উত্তর ২৪ পরগনা: পশ্চিমবঙ্গের একটি ঐতিহাসিক ও জনবহুল জেলা
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কলকাতা শহরের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই জেলাটি জনসংখ্যার দিক থেকে রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ জেলা। ১৯৮৬ সালে চব্বিশ পরগনা জেলার উত্তরাংশ থেকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা গঠিত হয়। বারাসত এর প্রশাসনিক সদর দপ্তর।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চল বসতি স্থাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গ্রিক ভুগোলবিদ টলেমি তার “ট্রিটিজ অন জিওগ্রাফি” গ্রন্থে গঙ্গারিডি বা গঙ্গারিদাই নামক অঞ্চলের উল্লেখ করেছেন, যার বিস্তার ছিল ভাগীরথী-হুগলি নদী থেকে পূর্বে পদ্মা নদী পর্যন্ত। গুপ্ত সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক প্রভাব, পাল বংশের শাসন, সেন যুগের মূর্তি, “মনসামঙ্গল” ও “চৈতন্যচরিতামৃত” গ্রন্থে উল্লেখ – এইসবই উত্তর ২৪ পরগনার ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আরও প্রমাণ করে। ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে পর্তুগিজ জলদস্যুদের আধিপত্য ছিল এই অঞ্চলে। মহারাজা প্রতাপাদিত্য তাদের পরাজিত করার চেষ্টা করেছিলেন।
ব্রিটিশ আমল:
১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের আধিপত্য শুরু হয়। ১৮২৪ সালে জেলা সদর কলকাতা থেকে বারুইপুরে এবং পরে আলিপুরে স্থানান্তরিত হয়। ১৮৩৪ সালে জেলা দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ এবং ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ভূগোল পরিবর্তিত হয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ও নীল বিদ্রোহ এই জেলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনীতি:
উত্তর ২৪ পরগনা নিম্ন গঙ্গা-বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত। জেলাটি সমতল ভূমি, ছোটো ছোটো নদী ও জলাভূমি সমৃদ্ধ। কৃষি এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক কার্যকলাপ। ধান, গম, পাট, ইক্ষু, তৈলবীজ ইত্যাদি ফসল উৎপাদিত হয়। বারাকপুর ও বারাসাত শিল্পাঞ্চল, তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র বিধাননগর – এইসব এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে গতিশীল করে তুলেছে।
জনসংখ্যা:
উত্তর ২৪ পরগনার জনসংখ্যা অত্যন্ত বেশি। জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ হিন্দু ও মুসলমান।
যোগাযোগ:
রেলপথ, বাস পরিষেবা এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (দমদম) এই জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করেছে।
পর্যটন:
দক্ষিণেশ্বর, বিধাননগর, নিউ টাউন, ব্যারাকপুর, টাকি, চন্দ্রকেতুগড়, বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ইত্যাদি পর্যটন কেন্দ্র এই জেলার আকর্ষণ।