কলকাতা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
পূর্ববঙ্গের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর কলকাতা, ভারতের এক অমূল্য সম্পদ। হুগলি নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত এই মহানগরী দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক কেন্দ্র। ৪,৪৯৬,৬৯৪ জনসংখ্যার এই শহরটি (২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী) ভারতের ৭ম সর্বাধিক জনবহুল পৌর এলাকা, আর বৃহত্তর কলকাতার জনসংখ্যা ১৪,১১২,৫৩৬। কলকাতা বন্দর ভারতের প্রাচীনতম ও প্রধান নদীবন্দর।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও ডিহি কলকাতা নামে তিনটি গ্রাম একত্রিত হয়ে কলকাতা শহরের সূচনা হয়। ১৬৯০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলে বাণিজ্য সনদ লাভ করে। ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা দখল করলেও, পরের বছরই ব্রিটিশরা পুনরায় দখল করে নেয়। ১৭৯৩ সালে ব্রিটিশরা এই অঞ্চলে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে। উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে কলকাতা স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৯১১ সালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে স্থানান্তরিত হলেও, কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী ও রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে থেকে যায়।
সংস্কৃতি ও শিল্পকলা:
কলকাতা উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর বাংলার নবজাগরণের কেন্দ্রস্থল। সাহিত্য, থিয়েটার, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা, সঙ্গীতের ক্ষেত্রে কলকাতা এক স্বতন্ত্র ঐতিহ্য বহন করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমুখ ব্যক্তি কলকাতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।
অর্থনীতি:
কলকাতা পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক কেন্দ্র। কলকাতা শেয়ার বাজার ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ার বাজার। স্বাধীনতার পর এক সময় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও, ১৯৯০-এর দশকের অর্থনৈতিক উদারীকরণ কলকাতার অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। আইটি খাত, আবাসন খাত, বৃহৎ ভারতীয় কর্পোরেশনগুলির অবস্থান কলকাতার অর্থনৈতিক প্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান:
কলকাতা ২২°৩৪′ উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮°২১′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ১.৫ মিটার থেকে ৯ মিটার। শহরের বেশিরভাগ অংশই আগে জলাজমি ছিল যা পরে বসতি স্থাপনের জন্য ভরাট করা হয়।
জনসংখ্যাগতিবিদ্যা:
কলকাতার জনসংখ্যার বেশিরভাগ অংশই বাঙালি। মারোয়ারী ও বিহারী সম্প্রদায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বাংলা ও ইংরেজি শহরের প্রধান ভাষা, ধর্মীয়ভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা সর্বাধিক।
পরিবহন:
কলকাতা শহরতলি রেল, মেট্রো রেল, ট্রাম এবং বাস পরিষেবা দ্বারা যুক্ত। হাওড়া সেতু ও বিদ্যাসাগর সেতু কলকাতাকে হাওড়ার সাথে যুক্ত করে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কলকাতার একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
সমস্যা:
ধোঁয়াশা, বায়ুদূষণ, যানজট, অপর্যাপ্ত পয়ঃপ্রণালী কলকাতার কিছু প্রধান সমস্যা।
উপসংহার:
কলকাতা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আধুনিকতার এক অসাধারণ মেলবন্ধন। এই শহর ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং ভবিষ্যতেও তার ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।