উত্তর গোলার্ধ: পৃথিবীর বিশাল অংশ
পৃথিবীর নিরক্ষরেখার উত্তর দিকে অবস্থিত অর্ধাংশকে উত্তর গোলার্ধ বলে। এটি পৃথিবীর মোট ভূ-ভাগের প্রায় ৬৭.৩% এবং জলভাগের ৬০.৭% জুড়ে রয়েছে। দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় এখানে স্থলভাগ অনেক বেশি। উত্তর আমেরিকা এবং ইউরেশিয়ার মূল ভূখণ্ড সম্পূর্ণ উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত, আফ্রিকার দুই-তৃতীয়াংশ এবং দক্ষিণ আমেরিকার একটি ছোট অংশও এখানেই অবস্থিত।
ঋতু পরিবর্তন:
পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের কারণে উত্তর গোলার্ধে ঋতু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত ২১ ডিসেম্বর থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত শীতকাল এবং ২১ জুন থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল থাকে। এই সময়কাল প্রতি বছর সূর্যের অবস্থানের উপর নির্ভর করে কিছুটা পরিবর্তিত হয়।
জলবায়ু ও আবহাওয়া:
উত্তর গোলার্ধের জলবায়ু বৈচিত্র্যময়। আর্কটিক অঞ্চলে শীতকালে তীব্র ঠান্ডা এবং গ্রীষ্মে শীতল আবহাওয়া থাকে। উত্তর মেরু অঞ্চলে গ্রীষ্মে সূর্য অস্ত যায় না এবং শীতকালে উঠে না। মধ্য অক্ষাংশে ঋতু পরিবর্তন মৃদু হয়। উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে সারা বছর উষ্ণ আবহাওয়া থাকে এবং গ্রীষ্মে বৃষ্টিপাত হয়।
প্রাকৃতিক ঘটনা:
কোরিওলিস প্রভাবের কারণে উত্তর গোলার্ধে বায়ু ও জলের প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে। এই প্রভাবের ফলে উত্তর আটলান্টিক ও উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরে চলা স্রোত দেখা যায়। উত্তর গোলার্ধে ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ের ঘূর্ণন ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে হয়।
জনসংখ্যা:
২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, উত্তর গোলার্ধে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৭% (প্রায় ৬.৪ বিলিয়ন) মানুষ বসবাস করে।
ঐতিহাসিক ঘটনা:
প্লাইস্টোসিন যুগে উত্তর গোলার্ধে বহুবার বরফ যুগ এসেছে। এই বরফ যুগের প্রভাব উত্তর গোলার্ধের ভূ-প্রকৃতি ও মানুষের বসতি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
উত্তর গোলার্ধের গুরুত্ব:
উত্তর গোলার্ধ পৃথিবীর বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে এবং বিভিন্ন দেশ, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এটি বিশ্বের বেশিরভাগ জনসংখ্যা ও ভূখণ্ডের আবাসস্থল। উত্তর গোলার্ধের ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, এবং ঐতিহাসিক ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।