ইয়াহিয়া খান

আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪:৪৪ এএম
নামান্তরে:
Yahya Khan
Agha Mohammad Yahya Khan
Agha Mohammed Yahya Khan
Agha Muhammad Yahya Khan
General Khan
General Yahya Khan
President Yahya Khan
Agha Yahya Khan
Yahiya Khan
আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান
ইয়াহিয়া খান

ইয়াহিয়া খান (৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ - ১০ আগস্ট ১৯৮০) ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন সর্বাধিনায়ক এবং ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও সামরিক শাসক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর আদেশেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর তিনি জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তিনি ছিলেন অখণ্ড পাকিস্তানের শেষ রাষ্ট্রপতি। ১৯৩৯ সালে তিনি দেহরাদুনের ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমী থেকে বেলুচ রেজিমেন্টে কমিশন পান।

ইয়াহিয়া খানের জন্ম হয় ১৯১৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাব প্রদেশের চকওয়ালে। তিনি পাঠান বংশোদ্ভূত ছিলেন এবং তার পিতা ব্রিটিশ ভারতীয় পুলিশে কর্মরত ছিলেন। ইয়াহিয়া দেহরাদুনের কর্নেল ব্রাউন ক্যাম্ব্রিজ স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরে লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি ভারতীয় সামরিক একাডেমী থেকে দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হিসেবে উত্তীর্ণ হন এবং ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১০ম বেলুচ রেজিমেন্টের ৪র্থ ব্যাটেলিয়নে যোগদান করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ইউরোপে কর্মরত ছিলেন এবং ইতালিতে বন্দী হলেও পরে পালিয়ে যান।

স্বাধীন পাকিস্তানে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং কোয়েটার স্টাফ কলেজে নিয়োগ পান। ১৯৫১ সালে ৩৪ বছর বয়সে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হন। পরবর্তীতে মেজর জেনারেল হিসেবে তিনি উপ প্রধান জেনারেল স্টাফ, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব, ৭ম ও ১৪তম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক এবং অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লেঃ জেনারেল পদে তিনি উপ সেনা সর্বাধিনায়ক ছিলেন।

১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খানের পদত্যাগের পর তিনি রাষ্ট্রপতি হন। তিনি নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান বিজয়ী হন। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানান, যার ফলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ছিলেন একাধারে রাষ্ট্রপতি, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, সশস্ত্র বাহিনী প্রধান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী, আইন ও বিচার মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।

পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের পর ইয়াহিয়া খান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের একটি সামরিক অভিযানের আদেশ দেন। এ অভিযানের ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ইয়াহিয়া খান রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ক্ষমতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে হস্তান্তর করেন। ১০ আগস্ট ১৯৮০ সালে রাওয়ালপিন্ডির সামরিক হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সর্বাধিনায়ক ছিলেন।
  • তিনি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
  • বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর আদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে হত্যাযজ্ঞ চালায়।
  • তিনি অখণ্ড পাকিস্তানের শেষ রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
  • ১৯৮০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।