ইহুদিবিদ্বেষ বলতে ইহুদি জাতি, গোষ্ঠী বা ধর্মের প্রতি যেকোনো ধরনের বৈরিতা বা কুসংস্কারকে বোঝায়। এটি ব্যক্তিগত ঘৃণা থেকে শুরু করে জাতিগত নিধন পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ইংরেজিতে একে 'অ্যান্টিসেমিটিজম' বলে, যার অর্থ সেমিটীয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ। সেমিটীয় একটি বৃহৎ ভাষাভাষী গোষ্ঠী, যার মধ্যে হিব্রু ও আরবিভাষী উভয়েই অন্তর্ভুক্ত। তবে, 'অ্যান্টিসেমিটিজম' শব্দটি সাধারণত ইহুদি-বিদ্বেষ বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়।
ইহুদিবিদ্বেষের ইতিহাস প্রাচীন। উনিশ শতকের পূর্বে এটি মূলত ধর্মভিত্তিক ছিল। খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইহুদি ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করত। খ্রিস্টান-শাসিত ইউরোপে ইহুদিরা ধর্মীয় নির্যাতন, সহিংসতা ও বহিষ্কারের শিকার হত। ধর্মীয় নির্যাতনের মধ্যে পড়ে ধর্মপালনে বাধা, জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও দেশ থেকে বিতাড়ন।
শিল্পবিপ্লবের পর ইহুদিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়। এই সময় জাতীয়তাবাদের বিকাশের সাথে ইহুদিদের প্রতি জাতিগত বিদ্বেষও দেখা দেয়। জাতিতত্ত্বের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ইহুদিদের অনার্য ও হীন বলে প্রচার করা হয়, এবং তাদের বিরুদ্ধে অর্থলোভী, শ্রমবিমুখ, ধূর্ত, গোত্রপ্রীতিপরায়ণ ও দেশপ্রেমহীনতার অভিযোগ আনা হয়। ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবী সমাজ ধর্মভিত্তিক বিদ্বেষকে অসংস্কৃত মনে করলেও জাতিগত বিদ্বেষকে 'বৈজ্ঞানিক' মনে করে গ্রহণ করে নেয়।
বিংশ শতকের তৃতীয় দশকে, নাৎসি শাসিত জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের দায় ইহুদিদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের নিধনমূলক আইন প্রণয়ন করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদি নির্যাতন ও নিধন চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয়, যা 'হলোকস্ট' নামে পরিচিত।
সম্প্রতি ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের পর ফ্রান্স ও জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষমূলক ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন দেশ ইহুদিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ইহুদি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টাও চলছে।