ইসকন: আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) হল গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী একটি হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। ইসকনের মূল ধর্মবিশ্বাস শ্রীমদ্ভাগবত, ভগবদ্গীতা ও অন্যান্য বৈদিক শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আধ্যাত্মিক সমাজে এটি ‘হরেকৃষ্ণ আন্দোলন’ নামেও পরিচিত। এর ভক্তরা দুগ্ধ-শাকাহারে বিশ্বাস করে এবং প্রাথমিকভাবে ভক্তিযোগ প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃষ্ণকে তারা সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সম্মান করে। এই আন্দোলন ভারতে দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং পূর্ব ইউরোপসহ অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে।
ইসকন গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের অংশ। গৌড়ীয় শব্দটি গৌড় অঞ্চলকে বোঝায় এবং বৈষ্ণব অর্থ বিষ্ণুর উপাসক। পঞ্চদশ শতাব্দীতে প্রবর্তিত এই মতবাদ ১৯৬০-এর দশক থেকে পাশ্চাত্যে ছড়িয়ে পড়ে। ভক্তিযোগ অনুশীলন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা ও হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ ইসকনের মূল উপজীব্য।
১৯৬৫ সালে ৭০ বছর বয়সে প্রভুপাদ পাশ্চাত্যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রচারের উদ্দেশ্যে নিউ ইয়র্কে আসেন। ১৯৬৬ সালের জুলাইয়ে তিনি ইসকন প্রতিষ্ঠা করেন। বৈদিক দর্শনের গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ‘ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট’ নামে একটি বৃহৎ প্রকাশনা সংস্থাও প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ইসকনের ৫০,০০০-এরও বেশি মন্দির ও কেন্দ্র, ৬০টি খামার, ৫৪টি বিদ্যালয় ও ৯০টি ভোজনালয় ছিল। ইসকন ভক্তরা দীক্ষার সময় চারটি মৌলিক নিয়ম অনুসরণ করে। জন্মাষ্টমী, রাধাষ্টমী, দিওয়ালি প্রভৃতি উৎসবও তারা পালন করে। প্রচারের জন্য প্রকাশ্যে হরে কৃষ্ণ মন্ত্র গান ও বৈদিক বই বিক্রি করে থাকে। চৈতন্য মহাপ্রভুর মতবাদ অনুসারে, এই অনুশীলন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই করতে পারে।
গভর্নিং বডি কমিশন (জিবিসি) ইসকনের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। ১৯৭০ সালে প্রভুপাদ এটি গঠন করেন। বর্তমানে জিবিসিতে ৪৮ জন সিনিয়র সদস্য রয়েছে। ইসকন আন্দোলনে কীর্তন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন স্থানে কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। বৈদিক ধর্মতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে নাট্য পরিবেশনাও হয়। হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কিছু বিখ্যাত গানেও ব্যবহৃত হয়েছে। বিটলসের জর্জ হ্যারিসন ইসকনের একজন অন্যতম সমর্থক ছিলেন।
ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট (বিবিটি) ইসকনের একটি অলাভজনক প্রকাশনা সংস্থা। ইসকনের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ISCOWP (গরু রক্ষার জন্য), ইসকন ট্রাইবাল কেয়ার ট্রাস্ট (আদিবাসীদের জন্য), এবং ফুড ফর লাইফ (খাদ্য সাহায্য)। পাণ্ডব সেনা ইসকনের একটি যুব সংগঠন। ইসকনের বিশ্বজুড়ে অনেক মন্দির, কেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রয়েছে। ভারতে ইসকনের কার্যক্রম সবচেয়ে ব্যাপক। মায়াপুরে বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়ামের মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন হতে চলেছে। বৃন্দাবন, চেন্নাই, নেপাল, ইউরোপ, আমেরিকা, বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইসকনের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
ইসকন নানা সময় নানা সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে শিশু নির্যাতন এবং অর্থনৈতিক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে। বাংলাদেশেও ইসকনের কার্যক্রম নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে।