ইবনে আবেদিন শামী: একজন বিশিষ্ট ইসলামি পণ্ডিত
ইবনে আবেদিন শামী, পূর্ণ নাম মুহাম্মদ আমিন বিন ওমর বিন আবদিল আজিজ আবিদিন আল-দামিশকি, ছিলেন ১৮ শতকের একজন বিশিষ্ট ইসলামি পণ্ডিত ও আইনবিদ। ওসমানী যুগে সিরিয়ার দামেস্ক শহরে বসবাসরত তিনি হানাফি মাজহাবের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি 'আমিন আল-ফতোয়া' উপাধিধারী একজন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ছিলেন, অর্থাৎ দামেস্কে আইনি প্রশ্নের সমাধানের জন্য লোকেরা তাঁর কাছেই আসত।
১৭৮৪ সালে দামেস্কে জন্মগ্রহণকারী ইবনে আবেদিনের পরিবার ছিল পণ্ডিত পরিবার। খুব কম বয়সে কুরআন শেখা ও মুখস্ত করার পর, প্রায় ১২ বছর বয়সে শায়খ মুহাম্মাদ আল-কুজবারী আল-কবীরের কাছ থেকে তিনি প্রথম সাধারণ ডিগ্রি অর্জন করেন। একজন অত্যন্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছাত্র হিসেবে তিনি বহু বিখ্যাত পণ্ডিতের কাছে শিক্ষা লাভ করেন এবং চারটি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইবনে আবেদিনের সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ হলো ‘রদ্দুল মুহতার ‘আলা আল-দুররুল মুখতার’। এটি আজও হানাফি ফিকহের অন্যতম আধিকারিক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। তিনি ৫০-এরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ফতোয়া সংকলন, গ্রন্থ, কবিতা এবং অন্যান্য গ্রন্থের ব্যাখ্যা। ১৮৩৬ সালে (১২৫২ হিজরি) ৫৪ বছর বয়সে দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তার শিক্ষক সাইয়্যিদ আল-হালাবি তার জানাজার নামাজ পড়ান।
ইবনে আবেদিনের ফতোয়া প্রদানের পদ্ধতিতে তার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করা যায়। তিনি ওসমানী যুগের প্রভাব ও স্থানীয় প্রথা (উরফ) কে ফতোয়ার সাথে সমন্বয় সাধন করার প্রয়াস পান। তিনি মনে করতেন, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক নিয়মকানুনও পরিবর্তিত হয় এবং আইনের নমনীয়তা অত্যন্ত প্রয়োজন। তিনি 'ইজতিহাদ' (ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা) ব্যবহারের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন, বিশেষ করে যখন কোনও বিষয়ে পূর্ববর্তী আলেমদের কোন স্পষ্ট মতামত না থাকে। ইবনে আবেদিনের লেখা ফতোয়া, বিবাহ ও পরিবার সম্পর্কে তার মতামত, এবং রাষ্ট্রের সাথে তার সম্পর্ক সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়।