ইকোসিস্টেম: একটি ব্যাখ্যা
ইকোসিস্টেম (Ecosystem) শব্দটির উৎপত্তি জার্মান বিজ্ঞানী হাকেল (Haeckel)-এর ১৮৬৬ সালের 'Oekologie' শব্দ থেকে। ১৯৩৫ সালে বাস্তুবিদ এ. জি. ট্যান্সলি (A. G. Tansley) এই শব্দটির বর্তমান রূপ প্রয়োগ করেন। একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার জীব ও জড় উপাদানের পারস্পরিক সম্পর্কের জটিলতাকে ইকোসিস্টেম বলা হয়। এটি একটি গতিশীল ব্যবস্থা যেখানে জীবজন্তু ও তাদের আশেপাশের পরিবেশের মধ্যে শক্তি এবং পুষ্টির আদান-প্রদান চলতে থাকে।
ইকোসিস্টেমের উপাদান:
জড় উপাদান: এতে মাটি, পানি, বায়ু, সূর্যালোক, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
জীব উপাদান: এতে উৎপাদক (উদ্ভিদ), প্রাথমিক খাদক (তৃণভোজী প্রাণী), গৌণ খাদক (মাংসাশী প্রাণী), আবর্জনাভোজী ও বিয়োজক (জীবাণু) অন্তর্ভুক্ত। উৎপাদক সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে, খাদক উৎপাদক বা অন্যান্য খাদক খায়, আবর্জনাভোজী মৃত জীব খায়, এবং বিয়োজক মৃত জীবকে বিশ্লেষণ করে জড় উপাদানে পরিণত করে।
শক্তির প্রবাহ: ইকোসিস্টেমে সূর্য শক্তির মূল উৎস। সূর্যের শক্তি উৎপাদকের মাধ্যমে খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন খাদ্যস্তর পরিব্যাপ্ত হয়। এই প্রবাহ একমুখী (unidirectional)। প্রতিটি খাদ্যস্তরে শক্তির একটি অংশ হারিয়ে যায়।
জীবের পারস্পরিক সম্পর্ক: ইকোসিস্টেমে বিভিন্ন জীব পরস্পরের সাথে বিভিন্ন রকম সম্পর্ক স্থাপন করে। এর মধ্যে উৎপাদক-খাদক, শিকারী-শিকার, পরজীবী-পোষক, মিথোজীবী ও প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য।
ইকোসিস্টেমের প্রকারভেদ: পরিবেশের ভিত্তিতে ইকোসিস্টেমের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে, যেমন- স্থলজ, জলজ (সমুদ্র, নদী, জলাশয়), কৃত্রিম ইত্যাদি।
উদাহরণ: একটি বন, একটি জলাশয়, একটি ক্ষেত, একটি মরুভূমি ইত্যাদি সবই ইকোসিস্টেমের উদাহরণ।