আয়নাঘর, ঢাকা: রহস্যময় গোপন কারাগারের অন্ধকার ইতিহাস
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘আয়নাঘর’ নামটি একটি রহস্যময় ও ভয়াবহ অধ্যায়ের প্রতীক। ঢাকায় অবস্থিত এই গোপন আটককেন্দ্রটি আওয়ামী লীগের শাসনামলে রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত বলপূর্বক গুমের ঘটনার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, আয়নাঘরে বহু ব্যক্তিকে অবৈধভাবে আটকে রেখে নির্যাতন ও অত্যাচার করা হয়েছে।
আয়নাঘর কি?
আয়নাঘর হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) কর্তৃক পরিচালিত একটি গোপন আটক কেন্দ্র। ধারণা করা হয় যে, এখানে কমপক্ষে ১৬ টি কক্ষ রয়েছে যেখানে একসাথে ৩০ জন বন্দী রাখার ক্ষমতা রয়েছে। সুইডেন ভিত্তিক স্বাধীন নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর আয়নাঘরের অস্তিত্ব জনসম্মুখে আসে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আয়নাঘরে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলপূর্বক গুমের শিকার হাসিনুর রহমান ও শেখ মোহাম্মদ সেলিমের সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আয়নাঘর ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত।
আয়নাঘরের বন্দীরা ও ঘটনা:
আয়নাঘরে বন্দী থাকার অভিযোগ রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোবাশ্বের হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায় সহ বহু ব্যক্তির। এছাড়াও, জামায়াতে ইসলামী নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেম, সাবেক সামরিক জেনারেল গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আজমি ও ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা আয়নাঘর থেকে মুক্তি পেয়েছেন বলে জানা যায়।
আয়নাঘর থেকে মুক্ত বন্দীরা ভয়াবহ নির্যাতন ও অমানবিক অবস্থার কথা বর্ণনা করেছেন। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, কারাগারের কক্ষগুলো ছিল আলোবাতাসহীন, জানালাবিহীন এবং সর্বদা উচ্চশব্দের ফ্যান চালু থাকতো।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিক্রিয়া:
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আয়নাঘরের অভিযোগগুলিকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে এবং নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
শেখ হাসিনার পতনের পর:
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আয়নাঘর আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে। বহু নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজে তাদের স্বজনরা কচুক্ষেতের মতো স্থানে ভিড় জমাচ্ছেন।
উপসংহার:
আয়নাঘরের ঘটনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের একটি অন্ধকার অধ্যায়। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। এই প্রতিবেদনে আয়নাঘরের সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি, তবে ভবিষ্যতে আরও তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে আমরা এই প্রতিবেদনটি আপডেট করব।