আলী আহসান মুজাহিদ

আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ: বাংলাদেশের রাজনীতির এক অন্ধকার অধ্যায়

আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (২৩ জুন, ১৯৪৮ - ২২ নভেম্বর, ২০১৫) ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আল-বদর বাহিনীর দ্বিতীয় কমান্ডার ছিলেন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:

মুজাহিদ ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মওলানা মোহাম্মদ আলী ছিলেন একজন ইসলামী পণ্ডিত এবং শান্তি কমিটির সদস্য। মুক্তিযুদ্ধের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধে তিনি শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বিচারের হাত থেকে রক্ষা পান। মুজাহিদ ফরিদপুর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

ছাত্র রাজনীতি ও আল-বদর:

১৯৬৮ সালে তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের ফরিদপুর জেলা সভাপতি এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা জেলা সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আল-বদর বাহিনীর দ্বিতীয় কমান্ডার হিসেবে কাজ করেন, যারা গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল।

রাজনৈতিক জীবন ও মৃত্যুদণ্ড:

মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর হয়ে কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড, লুটপাট, নির্যাতন ইত্যাদির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। ২০১৫ সালের ২২শে নভেম্বর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

উল্লেখ্য, মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও তার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই তার বিচারের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবুও, তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক।
  • ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি আল-বদর বাহিনীর দ্বিতীয় কমান্ডার ছিলেন।
  • মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
  • তিনি ২০০১-২০০৬ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন।
  • ২০১৫ সালের ২২শে নভেম্বর তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।