আমতলী উপজেলা: বরগুনা জেলার অন্যতম বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এটি বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত এবং এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, ভৌগোলিক সৌন্দর্য এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। প্রকৃতির কোলে অবস্থিত এ উপজেলার নামকরণের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু জনশ্রুতি। একটি জনশ্রুতি অনুসারে, পায়রা নদীর তীরে প্রচুর আম গাছের অস্তিত্বের কারণে এলাকার নামকরণ হয় ‘আমতলা’, যা পরবর্তীতে ‘আমতলী’ হয়ে ওঠে। অন্য একটি জনশ্রুতি রয়েছে যে আরাকান থেকে আগত একজন আমপারিট নামের রাখাইন দলপতি ইংরেজ সরকারের ইজারা নিয়ে আমতলীতে প্রথম আবাদ শুরু করেন, এবং তার নাম অনুসারেই এলাকার নামকরণ হয়।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, আমতলী চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অংশ ছিল এবং ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। ১৮৫৯ সালে গুলিশাখালী থানা প্রতিষ্ঠার পর ১৯০১ সালে নদীভাঙনের কারণে থানা সদর বর্তমান আমতলীতে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮২ সালে এটি উপজেলা হিসেবে গঠিত হয়।
ভৌগোলিকভাবে, আমতলী উপজেলার উত্তরে পটুয়াখালী সদর, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে গলাচিপা ও কলাপাড়া, এবং পশ্চিমে বরগুনা সদর ও মির্জাগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত। এটি প্রায় ৬৯৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এবং এখানে ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। বুড়িশ্বর ও আন্ধারমানিক নদী এবং রাবনাবাদ চ্যানেল উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
অর্থনৈতিকভাবে, আমতলীর অধিবাসীদের অধিকাংশই কৃষিকাজের সাথে জড়িত। ধান, চিনাবাদাম, খেসারি, মুগ, ছোলা, সরিষা, আলু, মরিচ, কুমড়া এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। এছাড়াও, মাছ ধরা, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, ওয়েল্ডিং কারখানা, মৃৎশিল্প, বাঁশ, বেত ও কাঠের কাজ উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্প।
জনসংখ্যার দিক থেকে, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আমতলীর জনসংখ্যা ছিল ২,৭০,৮০২। সাক্ষরতার হার ছিল ৫২.৮%। উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, এনজিও এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গাজীপুরের গরুর হাট ও গাজী কালুর মেলা উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আমতলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয়নি। আমতলী উপজেলার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সুন্দর প্রকৃতি, এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব একে বরগুনা জেলার এক অনন্য উপজেলা করে তুলেছে।