আব্দুল হক: স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অমর নায়ক
আব্দুল হক (১৯৩০ - ১৯ ডিসেম্বর ১৯৭১) বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। তিনি ১৯৩০ সালে তৎকালীন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার ছাতক থানাধীন ভাতগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন মৌলভী আব্দুল ওয়াহিদ এবং মাতা মাহেবুন নেছা।
শিক্ষাজীবনে তিনি সুনামগঞ্জ জুবিলী হাইস্কুল থেকে মেট্রিক, সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে আইএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিম উল্লাহ হলে তিনি জিএস নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও, তিনি ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন।
রাজনৈতিক জীবনে আব্দুল হক ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্টের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি ১৯৫৫ সালে গ্রেফতার হয়ে ১৩ মাস কারাভোগ করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বৃহত্তর ছাতক আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল হক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন ছিলেন। তিনি ৫ নম্বর সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা এবং ছাতক-জগন্নাথপুর-দিরাইয়ের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২৭শে মার্চ ১৯৭১ সালে দেওয়ান ওবায়দুর রাজার বাড়িতে গঠিত ১৩ সদস্য বিশিষ্ট সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা পরিষদের দ্বিতীয় সদস্য ছিলেন তিনি।
দুর্ভাগ্যক্রমে, ১৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে সিলেট-সুনামগঞ্জ রোডে টুকেরবাজার এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ দেশবাসী গভীর শোক প্রকাশ করে। ছাতক শহরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
আব্দুল হকের স্মরণে ১৯৭২ সালে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৬ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাঁশতলায় এমএনএ আব্দুল হকের নামে হকনগর ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয় যা বর্তমানে একটি অঘোষিত পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।