আবদুল হাই শিকদার: একজন বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক
আবদুল হাই শিকদার (জন্ম: ১৯৫৭) বাংলাদেশের একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। কবি হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত হলেও, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সাংবাদিকতা- সকল ক্ষেত্রেই তার অবদান উল্লেখযোগ্য। মানবতা, স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদী চেতনা, প্রেম, প্রকৃতি ও বিশ্বমানবতা – তার কবিতায় এসব বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে। ১৯৯৬ সালে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়া সত্ত্বেও তিনি মুক্তচিন্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপোষহীন ভূমিকা পালন করেছেন। ‘জাতিসত্ত্বার কবি’ হিসেবে তাঁর খ্যাতি বিস্তৃত।
জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনুসন্ধানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘কথামালা’ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি মুসলিম বাংলার প্রথম কবি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তি ও ঘটনা তুলে ধরেছেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।
১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদীর তীরে দক্ষিণ ছাট গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওয়াজেদ আলী এবং মা হালিমা খাতুন ছিলেন মওলানা ভাসানীর অনুসারী। গ্রামের স্কুল, ভুরুঙ্গামারী হাই স্কুল এবং রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) এবং পরে শান্ত মরিয়ম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
সাংবাদিকতা থেকে কর্মজীবন শুরু করে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, শত নাগরিক জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ, জাতীয় নজরুল সমাজ ইত্যাদি সংগঠনের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন। দৈনিক আমার দেশ-এর সিনিয়র সহকারী সম্পাদক ছিলেন এবং ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (UODA) এর সহযোগী অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ‘শাব্দিক সাহিত্যপত্র’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন এবং ৪৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুই টার্ম ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।
আবদুল হাই শিকদার প্রায় ১২০ টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, গবেষণা, তথ্যচিত্র নির্মাণ, আলোকচিত্র - তিনি সকল ক্ষেত্রেই তার দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। নজরুল সংক্রান্ত তথ্যচিত্র নির্মাণ এবং মুর্শিদাবাদ ও পলাশী কেন্দ্রিক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলা একাডেমীর ফেলো এবং নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।