আনসার ও গ্রামরক্ষী বাহিনী (Ansar VDP): বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী
১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের পর, পূর্ববঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়। এই প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে পূর্ববঙ্গ আইনসভায় ‘আনসার আইন’ পাস হয় এবং আনসার বাহিনী গঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে জাতীয় সার্ভিস বোর্ডের অধীনে থাকার পর ১৯৭৩ সালে এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (আনসার) নামে একটি পৃথক ক্যাডার গঠিত হয়।
আনসার বাহিনী গ্রামীণ অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা, এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তান আমলে থানা ও পুলিশের সংখ্যা সীমিত থাকায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আনসারদের মোতায়েন করা হতো। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধেও তারা সীমান্ত রক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বহু আনসার সদস্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা আনসার বাহিনীকে বেআইনি ঘোষণা করে এবং অনেক আনসারকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধে ৯ জন কর্মকর্তা ও ৬৩৫ জন আনসার শহীদ হন। দুজনকে ‘বীরবিক্রম’ ও ‘বীরপ্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে মুজিবনগরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার প্রধানকে ১২ জন আনসার ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে।
১৯৭৬ সালে আনসার ব্যাটালিয়ান গঠিত হয় যা আনসার ও গ্রামরক্ষী বাহিনীর (ভিডিপি) অংশ। বর্তমানে ৩৪টি আনসার ব্যাটালিয়ান দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। আনসার ও ভিডিপির তিনটি প্রধান অঙ্গসংগঠনকে ১৯৯৫ সালে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্যোগ মোকাবিলা, সামাজিক উন্নয়ন, আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে আনসার ও ভিডিপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে আনসার ও ভিডিপিতে প্রায় ২৬১৩ জন নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রায় ১৪,০০০ ব্যাটালিয়ান আনসার, ১৮,০০০ অঙ্গীভূত আনসার, ৩ লক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী আনসার এবং প্রায় ৪৩ লক্ষ ভিডিপি সদস্য রয়েছে। এদের প্রশিক্ষণের জন্য গাজীপুরের সফিপুরে একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি এবং ঢাকায় দুটি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়াও দেশব্যাপী রেঞ্জ অফিস, জেলা অফিস, ব্যাটালিয়ান হেডকোয়ার্টার, থানা অফিস এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ভিডিপি নেতা রয়েছে।
আনসার-ভিডিপি নারী ও পুরুষ উভয়কেই সমান সুযোগ প্রদান করে এবং বিভিন্ন বৃত্তিমূলক ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। ১৯৯৫ সালে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় যা আনসার-ভিডিপি সদস্যদের ঋণ প্রদান করে। ১৯৯৮ সালে আনসার ও ভিডিপিকে ‘জাতীয় পতাকা’ প্রদান করা হয়। আনসার বাহিনী বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও উন্নয়নে অবিচ্ছেদ্য অংশ।