অভিভাবকত্ব

আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:৩৮ এএম

বাংলাদেশে নাবালক শিশুদের অভিভাবকত্ব নির্ধারণ একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন ধর্ম ও আইনের প্রেক্ষিতে অভিভাবকত্বের ধারণা ও নিয়মাবলী বৈচিত্র্যময়। প্রচলিত অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ এবং মুসলিম ব্যক্তিগত আইন, হিন্দু ব্যক্তিগত আইন, খ্রিস্টান ব্যক্তিগত আইন এবং সাম্প্রতিক আদালতের রায়সমূহের আলোকে এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

মুসলিম আইন: মুসলিম আইনে পিতা সন্তানের প্রাকৃতিক অভিভাবক। তবে মায়েরও সন্তানের লালন-পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ছেলে সন্তান ৭ বছর এবং মেয়ে সন্তান বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত মায়ের জিম্মায় থাকার অধিকার রয়েছে (হিজানা)। তবে পিতার মৃত্যু বা অন্যান্য কারণে পিতা অযোগ্য হলে, আদালত সন্তানের স্বার্থ বিবেচনা করে মাকে অভিভাবকত্ব দিতে পারেন। আদালতের বিচারবুদ্ধি এবং সন্তানের কল্যাণই এই ক্ষেত্রে মুখ্য বিষয়।

হিন্দু আইন: হিন্দু আইনেও পিতাই নাবালকের প্রকৃত অভিভাবক। মায়ের অধিকার সীমিত, তবে অবৈধ সন্তানের ক্ষেত্রে মা অভিভাবক হতে পারেন। ধর্মান্তরের কারণে অভিভাবকত্বের অধিকার হারিয়ে যায় না।

খ্রিস্টান আইন: খ্রিস্টান আইনেও বাবা সন্তানের স্বাভাবিক অভিভাবক, তবে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে আদালত সন্তানের স্বার্থ বিবেচনা করে অভিভাবক নির্ধারণ করেন।

প্রচলিত আইন: অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ এবং সম্প্রতি হাইকোর্টের রায় নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনে। হাইকোর্ট পিতৃপরিচয়হীন সন্তানের ক্ষেত্রে মাকে অভিভাবক স্বীকৃতি দিয়েছেন। এছাড়াও, সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণের জন্য একটি নির্দেশিকা ও নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।

২০২৪ সালের ঘটনা: ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল, হাইকোর্ট ১৮৯০ সালের অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইনের ১৯(খ) ধারার সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার সম্ভাবনায় রুল জারি করেন এবং সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণের নির্দেশিকা ও নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই রিটে থিঙ্ক লিগ্যাল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারীপক্ষ এবং একাডেমি অব ল অ্যান্ড পলিসি অংশগ্রহণ করেছিল। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক এই রুল জারি করেছিলেন।

বিভিন্ন আইন এবং আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে সন্তানের কল্যাণই মূল বিবেচ্য বিষয়। আইন এবং সমাজের ধারণা উভয়েরই পরিবর্তন প্রয়োজন।

মূল তথ্যাবলী:

  • মুসলিম আইনে পিতা প্রাকৃতিক অভিভাবক, তবে মায়েরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
  • হিন্দু আইনেও পিতাই প্রধান অভিভাবক।
  • খ্রিস্টান আইনে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে আদালত সিদ্ধান্ত নেয়।
  • প্রচলিত আইনে ২০২৪ সালের হাইকোর্টের রায় পিতৃপরিচয়হীন সন্তানের ক্ষেত্রে মাকে অভিভাবকত্ব দিয়েছে।
  • সন্তানের কল্যাণই মূল বিবেচ্য বিষয়।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - অভিভাবকত্ব

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

জনকণ্ঠ পত্রিকার প্রতিবেদনে ‘খারাপ প্যারেন্টিং’ এর কিছু দিক তুলে ধরা হয়েছে যা শিশুদের উন্নয়নে সহায়ক।