বাংলাদেশের অতিথি পাখি: একটি বিস্তারিত আলোচনা
শীতের আগমনে বাংলাদেশে আগমন করে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি, যাদের আমরা 'অতিথি পাখি' বলে ডাকি। এই পাখিগুলো মূলত উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত এবং হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে আসে। শীতের তীব্রতা ও খাদ্য সংকট এড়াতেই তারা বাংলাদেশের তুলনামূলক উষ্ণ ও খাদ্যসমৃদ্ধ পরিবেশকে বেছে নেয়।
অতিথি পাখির আগমন ও প্রস্থান:
সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এরা দলবেঁধে আসা শুরু করে এবং মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমাদের দেশে অবস্থান করে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখি দেখা যায়।
বাংলাদেশে অতিথি পাখির আবাসস্থল:
এই পরিযায়ী পাখিগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাভূমি, হাওর, বিল, পুকুর, নদী-নালা ও উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয় নেয়। টাঙ্গুয়ার হাওর, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ, ঢাকার কাছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়, বরিশালের দুর্গাসাগর, নীলফামারীর নীল সাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা, নিঝুম দ্বীপ, ঢালচর, চরকুকরী মুকরী, দুবলার চর, হাকালুকি হাওর, মিরপুর চিড়িয়াখানার লেক ইত্যাদি স্থানে এদের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়।
অতিথি পাখির প্রজাতি:
বাংলাদেশে প্রায় ২০০-২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বুনো হাঁস, খঞ্জনা, কাদাখোঁচা, বক, সারস, গ্যাডওয়েল, কমন পোচার্ড, নর্দান পিনটেইল, বালি হাঁস, রাঙামুড়ি, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখী, রাঙামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল ইত্যাদি।
সংখ্যা হ্রাস ও সংরক্ষণ:
দুর্ভাগ্যবশত, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে অতিথি পাখির সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। জলাভূমি কমে যাওয়া, অবাধ শিকার, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি এ ক্ষেত্রে প্রধান কারণ। অতিথি পাখি সংরক্ষণের জন্য সরকার বিভিন্ন অভয়ারণ্য তৈরি করেছে এবং শিকারকে দণ্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করেছে। তবে, আইনের প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি আরও জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে।
উপসংহার:
অতিথি পাখিগুলো আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপূর্ব সম্পদ। এদের সংরক্ষণ আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই দুর্লভ প্রাণীদের উপভোগের সুযোগ রক্ষা করতে পারব।